শিক্ষার্থীদের দিয়ে উকুন বাছান-চুল বাঁধান প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকারা
সকাল সাড়ে নয়টায় শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিত হবার কথা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষক স্কুলে সময়মত আসেন না। কোন কোন স্কুলে ২-১ জন শিক্ষক উপস্থিত হলেও নারী শিক্ষকদেরকে স্কুলের বারান্দায় শিক্ষার্থীদের চুলে উকুন বাছাতে দেখা যায়। কোথাও শিক্ষিকারা ছাত্রীদের দিয়ে চুলের বেনি করাচ্ছেন। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক না থাকায় হৈ হুল্লোর করে শিশু শিক্ষার্থীরা। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন দুই দিন ধরে আকস্মিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থার এসব চিত্র তার চোখে পড়ে। শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তিনি উল্লাপাড়ায় কয়েকদিন আগে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার তিনি উপজেলার মগড়া চড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দবিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করেন। সকাল সাড়ে নয়টায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়েই একজন শিক্ষককেও স্কুলে উপস্থিত পাননি তিনি। বেলা ১০টা পর্যন্ত অধিকাংশ স্কুলে বেশির ভাগ শিক্ষক আসেন না। রানীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি দেখতে পান স্কুলের বারান্দায় এক শিক্ষিকার চুলের বেনি বেঁধে দিচ্ছেন অন্য একজন মহিলা। অন্য একটি স্কুলে এক শিক্ষিকাকে শিক্ষার্থীদের দ্বারা মাথার উকুন বেছে নিতে দেখেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরও জানান, তিনি স্কুলে প্রবেশ করার পর বারান্দায় বসা শিক্ষকরা দ্রুত তাদের অফিস কক্ষে ঢুকে পড়েন। দবিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে কোন শিক্ষক না থাকায় ইউএনও শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের হৈ চৈ থামান এবং শিক্ষকরা না আসা পর্যন্ত পাঠদান করেন। তিনি বলেন, যেসব স্কুলে অব্যবস্থাপনা পাওয়া গেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ এখানে স্কুলগুলো শিক্ষা বিভাগ থেকে তদারকি করা হয় না। শিক্ষকদের মধ্যেও রয়েছে দায়িত্বহীনতা ও আন্তরিকতার অভাব। যে কোন মূল্যে সরকারের শিক্ষার মানোন্নয়নের সব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তিনি এখন থেকে নিয়মিত স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আল মাহমুদের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের পর এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক শিক্ষা