শিক্ষা নিউজ

রংপুরের অতীত ইতিহাস ,রংপুরের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ,রংপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি

রংপুরের অতীত ইতিহাস ,রংপুরের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ,রংপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি রংপুরের মানুষের সরলতা ও সাদাসিধা মানসিকতার কারণে আমাদেরকে অন্যান্যরা বিদ্রূপ করে। যারা আমাদেরকে বিদ্রূপ করে থাকে কয়েকটি তথ্য দিয়ে তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই যাঁদের তারা বিদ্রূপ করে সেই রংপুর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে রংপুরের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাস কতোটা ঋদ্ধ। কতোটা গর্ব করার মতো।

০১) রঙ্গপুর বার্তাবহ : বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রথম সংবাদ পত্রটি এই রংপুর থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৪৭ সালের আগস্টের শেষভাগে (ভাদ্র ১২৫৪ বঙ্গাব্দ) রংপুর থেকে (বর্তমান বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর থেকে) প্রকাশিত হয় সংবাদ পত্র “রঙ্গপুর বার্তাবহ”। কুন্তির জমিদার কালী চন্দ্র রায় চৌধুরীর অর্থায়নে প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা। সম্পাদক ছিলেন গুরুচরন রায়। ১৮৫৭ সালের ১৩ জুন গভর্নর লর্ড ক্যানিং জারী করেন ১৫ নং আইন। মুদ্রণ যন্ত্রের স্বাধীনতা নাশক এই আইনে ১৮৫৯ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় রঙ্গপুর বার্তাবহ।

০২) প্রফুল্ল চক্রবর্তী, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ : হ্যাঁ, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ রংপুরেরই সন্তান প্রফুল্ল চক্রবর্তী। ১৯০৫ সালে দেশের সমস্ত মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে লর্ড কার্জন কর্তৃক ঘোষিত বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল ইংরেজ বিরোধী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন। ১৯০৭ সালে অগ্নিযুগের বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষ রংপুরে আসেন পিতা জেলা সিভিল সার্জন কৃষ্ণ ধন ঘোষের চাকুরীর সুবাদে। সেসময় বিপ্লবী বারীণ ঘোষ বোমা বানানোর কৌশল শিখে এসেছিলেন জার্মান থেকে। তাঁর কাছে সেই কৌশল শিখে নেন প্রফুল্ল চক্রবর্তী। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ২টি বোমা তৈরী করা হয়েছিল। ভারতের দেওঘরে একটা পাহাড়ের আড়ালে নিজের বানানো বোমার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে গিয়ে দুর্ভাগ্যবশত সেই বোমার বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই সাথে বনে যান ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদান। এই প্রফুল্ল চক্রবর্তী রংপুরের সন্তান। ছিলেন রংপুর জিলা স্কুলের ছাত্র। যদিও জিলা স্কুল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল ০৭ আগস্ট ১৯০৫ ইং রংপুর টাউন হলে লর্ড কার্জনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে। প্রফুল্ল চক্রবর্তীর পিতা শালবনের ঈশান চক্রবর্তীও ছিলেন মনে প্রাণে একজন ব্রিটিশ বিরোধী ব্যক্তি। এই ব্রিটিশ বিরোধিতার কারণেই সরকারী চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাঁকে। পরে তিনি “স্বদেশ ভাণ্ডার” নামে শহরে একটা নাম সর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।

০৩) ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে বলার কিছুই নেই। আমরা সবাইই তা জানি। বলতে চাই মজফফরপুরের সেই অপারেশনে ক্ষুদিরাম বসুর সহযোগী প্রফুল্ল চাকী সম্পর্কে। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাত আটটায় মজফফরপুরে কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বোমা ছুঁড়ে মারার পরে ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়লেও প্রফুল্ল চাকী পুলিশের নজর এড়িয়ে ট্রেনে উঠেন কলকাতা যাবার জন্য। কিন্তু সে রাতেই (০১ মে ১৯০৮ ইং) তিনিও ধরা পরে গেলেন কুখ্যাত নন্দলাল দারোগার কাছে। মামলায় নির্ঘাত ফাঁসী হবে তাই আত্মসমর্পণের আগেই নিজের গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। হয়ে যান বাংলার প্রথম প্রকাশ্য শহীদান। প্রফুল্ল চাকীরও স্মৃতি ধন্য আমাদের প্রাণ প্রিয় রংপুর।

রংপুরের সিভিল সার্জন কৃষ্ণ ধন ঘোষের পুত্র ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সৈনিক অগ্নিযুগের বিপ্লবী বারীণ ঘোষ পিতার চাকুরীর সুবাদে ১৯০৭ সালে রংপুরে আসলে তাঁর সংস্পর্শে আসেন কৈলাস রঞ্জন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র নবম শ্রেণীর ছাত্র বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। একই বছরের শেষ দিকে বারীণ ঘোষের সাথে কলকাতায় চলে যান তিনি। ইতি ঘটে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনার। অর্থাৎ ব্রিটিশ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম দুই শহীদের (প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য) স্মৃতি ধন্য আমাদের রংপুর।

০৪) ক্ষুদিরামের মামলা পরিচালনায় রংপুরের আইনজীবী : মজফফরপুর সেশন আদালতে ক্ষুদিরামের বিচার কাজ শুরু হলো ০৮ জুন ১৯০৮। কিন্তু সারা পশ্চিম বাংলা থেকে কোন আইনজীবী মামলায় আসামী পক্ষের হয়ে কোন আইনজীবী আদালতে দাঁড়াতে সাহস পাননি। তখন পূর্ব বঙ্গ থেকে রংপুর বারের উকিল বাবু সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তী, বাবু কুলকমল সেন ও বাবু নগেন্দ্রনাথ লাহিড়ী ক্ষুদিরামের পক্ষে মামলায় সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। বিচার শুরুর কয়েকদিন আগেই তাঁরা মজফফরপুর চলে যান মামলা পরিচালনা করার জন্য। নগরীর শালবনে রোকেয়া কলেজ সংলগ্ন এলাকায় সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তী। এই প্রসঙ্গে রংপুরের বরেণ্য কবি নূরুল ইসলাম কাব্য বিনোদ তাঁর “হামার অমপুর” কবিতায় লিখেছেন –

“ক্ষুদিরামের মামলার উকিল সতীশ চক্রবর্তীর বাড়ি
ভব সুন্দরী আস্তার বগলোত এ্যালাও দেকাইবার পারি।”

০৫) “রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ”, ১৯০৫ সালের ২৪ এপ্রিল (১২ বৈশাখ ১৩১২ বঙ্গাব্দ) রংপুর টাউন হলে এক সভা থেকে কাকিনার জমিদার মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরীকে সভাপতি এবং সুরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৮ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় “রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ”। যা ছিল কলিকাতার বাহিরে “বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ” এর প্রথম শাখা। আর এই শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী। এই পরিষদকে বলা যায় বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সাহিত্য চর্চার প্রথম বাতিঘর।

০৬) উপমহাদেশে প্রথম জাতীয় স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুরেই। ব্রিটিশদের কেরানী বানানোর শিক্ষার বিপরীতে শুরু হয় জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন। এরই পরিপ্রেক্ষিত দেশব্যাপী শুরু হয় ন্যাশনাল স্কুল বা জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ইংরেজ প্রবর্তিত কেরানী বানানোর জন্য দাসত্বমূলক ও জাতীয় উন্নয়নের পরিপন্থী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনতার চেতনার পরিপোষক দেশোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করাই ছিল জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর রংপুর কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় অবিভক্ত বাংলার প্রথম ‘জাতীয় বিদ্যালয়’। সেদিন রংপুর অবিভক্ত বাংলাকে পথ দেখিয়েছিল। একথা গৌরবের সাথে উল্লেখ্য যে, স্বদেশী আন্দোলনের সহজাত জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে রংপুরের অবদান ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। রংপুর জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ব্রজসুন্দর রায় এম.এ এবং সেকেন্ড মাস্টার ছিলেন নগেন সেন। অর্থাৎ এই দিক দিয়েও রংপুর এগিয়ে।

০৭) বাংলা ভাষায় প্রথম সামাজিক নাটক রামনারায়ন তর্করত্ন রচিত “কুলীনকুল সর্বস্ব”, যার সাথে জড়িয়ে আছে রংপুরের নাম। এই নাটক রচনায় পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য রংপুরের কুন্ডি পরগণার বিদ্যোৎসাহী জমিদার কালিচন্দ্র রায় চৌধুরীও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। উল্লেখ্য, বিদ্যোৎসাহী জমিদার কালিচন্দ্র রায় চৌধুরীর অর্থায়নেই ১৮৪৭ সালে রংপুর থেকে প্রকাশিত হয় বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রথম সংবাদ “রঙ্গপুর বার্তাবহ”। বাঙ্গালীর প্রত্যক্ষ ও বাস্তব সামাজিক ঘটনাবলির উপরে একটা নাটক রচনার জন্য ১৮৫৩ সালের ০৮ নভেম্বর “রঙ্গপুর বার্তাবহ” পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞাপনটি এইরূপ –

“বিজ্ঞাপন, পঞ্চাশ টাকা পারিতোষিক। এই বিজ্ঞাপন পত্র দ্বারা সর্বসাধারণ কৃতবিদ্য মহোদয়গণকে বিজ্ঞাত করা যাইতেছে যে, যিনি সুলিখিত গৌড়ীয় ভাষায় ছয় মাসের মধ্যে “কুলীনকুল সর্বস্ব” নামক একখানি মনোহর নাটক রচনা করিয়া রচকগণের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্টটা দর্শাইতে পারিবেন তাঁহাকে সঙ্কল্পিত ৫০ টাকা পারিতোষিক প্রদান করা হইবে। শ্রী কালিচন্দ্র রায় চৌধুরী, রঙ্গপুর কুন্তির জমিদার।”

এই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী কলকাতার হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজের প্রধান পণ্ডিত রামনারায়ন তর্করত্ন (ভট্টাচার্য) “কুলীনকুল সর্বস্ব” নাটক রচনা করে এই প্রতিযোগিতায় প্রেরণ করেন। প্রতিযোগিতায় তাঁর রচিত নাটক সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত হওয়ায় তিনি সেই পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেন, ১৮৫৪ সালে বাঙ্গালীর প্রত্যক্ষ ও জীবনাশ্রিত প্রথম নাটক রচিত হয়, ইহার নাম “কুলীনকুল সর্বস্ব” এবং ইহার রচয়িতার নাম রামনারায়ন তর্করত্ন। ইতোপূর্বে বাংলা ভাষায় যে সকল নাটক রচিত হইয়াছে, তাহাদের প্রত্যেকটিতেই সমসাময়িক সমাজ জীবনের বাস্তব রূপ প্রকাশ পাইতে পারে নাই। সুতরাং ইহারা বাংলা ভাষায় রচিত হইলেও যথার্থ বাঙ্গালীর নাটক হইয়া উঠিত পারে নাই। বাংলা ভাষায় সর্ব প্রথম নাটক রচিত হইবার দুই বছরের মাথায় সেই অভাব পূরণ হইয়া গেলো, প্রকাশিত হইলো মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর সামাজিক সমস্যা ভিত্তিক প্রথম সামাজিক নাটক “কুলীনকুল সর্বস্ব”।

৮) অবিভক্ত বাংলায় কোলকাতার বাহিরে জেলা পর্যায়ে প্রথম কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের মধ্যে জেলা পর্যায়ে প্রথম টেকনিক্যাল স্কুল।

১৮৬৫ সালে রংপুরের জমিদারবৃন্দের উদ্যোগে ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের মধ্যে কোলকাতার বাহিরে জেলা পর্যায়ে প্রথম টেকনিক্যাল স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রংপুর আর্টিজান স্কুল’। স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জমিদারবৃন্দ সম্মিলিতভাবে ৫০০টাকা দান এবং স্কুলের খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ৬৫ টাকা বরাদ্দ করেন। তখন স্কুলে বাংলা ভাষায় জ্ঞান দান এবং অংক শিক্ষা ছাড়াও কাঠমিস্ত্রি, দর্জি গিরি ও কামার পেশার কাজ হাতে কলমে শেখানো হতো।

০৯) মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার প্রথম শহীদ রংপুরের রনি রহমান : রংপুরের কৃতী সন্তান দেওয়ান মিজানুর রহমান (রনি) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়ায় প্রথম শহীদ হন। ’৭১-এর ২৭ মার্চ কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের সামনে পাকবাহিনীর গাড়ি বহরে হাতবোমা নিক্ষেপের সময় পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন সাংস্কৃতিক কর্মী রনি । রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন এক পরিচিত মুখ। দৃঢ়চেতা এই যুবক বুকের মধ্যে লালন করতেন একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন।

রংপুর সরকারি কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন শহীদ রনী রহমান সহপাঠী রুনু, জয়নাল ও পোকাসহ আরও কয়েক বন্ধুকে নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রংপুর প্রেসক্লাবে (বর্তমান পায়রা চত্বর) লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। এ খবর পাকিস্তানি শাসকদের কানে গেলে সরকার তাঁর নামে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এই ঘটনার পরে তাঁর পক্ষে আর রংপুরে থাকা সম্ভব হয়নি। তাই আত্মগোপনে চলে যান রনি রহমান।

রংপুর ত্যাগ করে তিনি কুষ্টিয়ায় বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানেও তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ’৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্য কুষ্টিয়ায় প্রবেশ করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেননি এই বীর সেনানী। তাই এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিশোধ নিতে তিনি রাতের অন্ধকারে কুষ্টিয়া কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগারের তালা ভেঙে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে তা দিয়ে হাত বোমা তৈরি করেন।
২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে সহযোদ্ধা আব্দুল জলিল, কমর উদ্দিন, শামসুল হাদী, মতিউর রহমান মতি, রাজা, আনিস, হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে তিনি “নিজামত উল্লাহ সংসদ’’ ক্লাবের কাছে যান। সবাইকে নিচে রেখে তিনি বোমা নিয়ে “নিজামত উল্লাহ সংসদ’’র ছাদে উঠে অপেক্ষা করতে থাকেন। উদ্দেশ্য ছিল পাক সেনাদের ওপর ওই বোমা নিক্ষেপ করা।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে পাক হানাদার বাহিনীর গাড়ি এগিয়ে আসতে থাকে। হঠাৎ করেই মিউনিসিপালটি মার্কেটের ছাদ থেকে ৮/১০ বছরের একটি ছেলে গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় কয়েকজন সৈনিক ঢিল নিক্ষেপকারীকে খুঁজতে “নিজামত উল্লাহ সংসদ’’র ছাদে উঠে বোমা নিক্ষেপে উদ্যত রনি রহমানকে দেখে ফেলে এবং গুলি ছোড়ে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন রনি।
পরে কুষ্টিয়ার পৌর গোরস্থানে রনি রহমানকে দাফন করা হয়। সেই কবরস্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম ফলক নিয়ে ৪০ বছর ঘুমিয়ে আছেন রংপুরের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী শহীদ রনী রহমান।

১০) ১৯৭১ এর ৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে রংপুর অঞ্চলের (অনেকের মতে দেশের) প্রথম শহীদ কিশোর শংকুর রক্তে রঞ্জিত হয় রংপুরের মাটি। একাত্তরের ৩ মার্চ। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করার পরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে সারা বাংলা। রংপুরেও হরতালের সমর্থনে কাচারী বাজার এলাকা থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও রংপুর জেলা ছাত্রলীগের মিছিল বের হয়। মিছিলটি আলমনগর এলাকায় পৌঁছলে এক কিশোর ছবির একটি বাসায় উর্দুতে লেখা সাইনবোর্ড দেখে তা নামিয়ে ফেলতে যান সবার অলক্ষ্যে। বাসাটি ছিল অবাঙ্গালী ব্যবসায়ী সরফরাজ খানের এবং বাসার ছাদ থেকে মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হন ৭ম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর শংকু সমজদার । মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ কিশোরকে মুসলিম উদ্দিন কমিশনার পাঁজাকোলা করে নিয়ে দৌড়লেন হাসপাতালের দিকে। কিন্তু ততোক্ষণে ইতিহাস রচিত হয়ে গেছে। পথেই কিশোর শংকু মারা যান। হয়ে যান ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে রংপুর অঞ্চলের প্রথম শহীদ তো সেই কিশোরই। এই বিষয়ে আমরা অন্য একটা পোস্টে বিস্তারিত বলেছি।

১১) বাংলার মাটিতে প্রথম পাক সেনা হত্যা : ১৯৭১ এর ৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ কিশোর শংকুর রক্তে রঞ্জিত হয় রংপুরের মাটি। রচিত হয় ইতিহাস। তেমনি বাংলার মাটিতে প্রথম পাক সেনা হত্যার ঘটনাও রংপুরেই ঘটে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন ৭১’র ২৬ মার্চ আর পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ট্যাংক ডিভিশনের পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেন আব্বাসীসহ তিন জন জওয়ানকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ আরম্ভ করে রংপুর জেলার সদর উপজেলার সাতগাড়া ইউনিয়নের দামোদরপুর সাধারণ, অনাহারী, জীর্ণশীর্ণ মানুষ। রচিত হয় ইতিহাস। দিনটি ছিল ২৪ মার্চ ১৯৭১। তাই ২৪ মার্চ শুধু রংপুর নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।

১২) দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রংপুরের বীর জনতার ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও। ২৮ মার্চ ১৯৭১। (অসমাপ্ত)

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে DailyResultBD.com ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group