শিক্ষা খবর

রংপুর জেলার ইতিহাস ,নামকরণের ইতিহাস জেনে নিন

রংপুর জেলার ইতিহাস রংপুরের রঙ্গপুর নামকরণের কারণ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। রংপুরের নামকরণের ক্ষেত্রে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজীর অবদান গ্রহণযোগ্য। ‘রঙ্গপুর’ শব্দটি ফারসি শব্দ। তাই সঙ্গত কারণে বখতিয়ার শাসনামলেই রংপুরের নাম ‘রঙ্গপুর’ হয়েছে।

রংপুর নামকরণের ইতিহাস লোকমুখে প্রচলিত আছে যে পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে এই নামটি এসেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, উপমহাদেশে ইংরেজরা নীলের চাষ শুরু করে। এই অঞ্চলে মাটি উর্বর হবার কারণে এখানে প্রচুর নীলের চাষ হত। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন ‘রঙ্গ’ নামেই জানত। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর।

রংপুরের পূর্ব নাম কি? রংপুর জেলার অপর নাম জঙ্গপুর । ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় কেউ কেউ এই জেলাকে যমপুর বলেও ডাকত। তবে রংপুর জেলা সুদুর অতীত থেকে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাঁটি ছিল। তাই জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম হিসেবে ধরা হয়।

রংপুর জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? জেলা হিসাবে স্বীকৃতি ১৮৬৯ খ্রি.

১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরকে সেনাপতি মানসিংহ রংপুরের অংশ বিশেষ দখল করেন। ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে রংপুর সম্পূর্ণভাবে মোঘল সম্রাজ্যভুক্ত হয়। আজও এ অঞ্চলে মোগল শাসনের স্মৃতি বহন করছে কুড়িগ্রামের মোগলবাসা ও মোগলহাট। মোগল আমলে রংপুর ছিল ঘোড়াঘাট সরকারের অন্তর্ভুক্ত। ‘বিয়াজুস সালাতীন’ নামক ইতিহাস গ্রন্থে রঙপুর ঘোড়াঘাটের নাম পাওয়া যায়। কোম্পানি আমলে ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলন ও প্রজা বিদ্রোহ এখানকার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা।

আইন-ই-আকবরীর বিবরণ অনুযায়ী মোঘল রংপুর ৩ ধরনের প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে ঘোড়াঘাটে মোগলদের একটি ফৌজদারী হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। একই স্থানে কাকিনা, কাজিরহাট, ফতেহপুর মোগলদের অধীনে আসে এবং ২৪ বছর পর ১৭১১ খ্রি. সমগ্র রংপুরে মোগল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর তিন দশকের শুরুতে মাহিগঞ্জে পর্যন্ত মোগল ইতিহাসের আর তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী লাভের পর রংপুর নতুন ব্যবস্থায় ইংরেজ শাসনাধীন আসে। রংপুর অঞ্চলে সর্বপ্রথম ১৭৬৫ সালে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে বিদ্রোহী সিপাহীরা। এ অঞ্চলে ইংরেজ শাসকদের মাঝে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বপ্রথম কংগ্রেসের ডাকে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর এখানে উত্তরবঙ্গের কৃষক নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং নভেম্বরে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান : রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে ঐতিহ্যবাহী জনপদ। রংপুর জেলার উত্তরে লালমনিরহাট, পূর্বে কুড়িগ্রাম, দক্ষিণ-পূর্বেগাইবান্ধা, উত্তর-পশ্চিমে নীলফামারী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। তিস্তা নদীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তকে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা থেকে পৃথক করেছে। রংপুর জেলার মোট আয়তন ২৩৬৭.৮৪ বর্গকিলোমিটার। ৮টি উপজেলা, ৮৩টি ইউনিয়ন, ৩টি পৌরসভা ও ১২১৪টি মৌজা নিয়ে জেলাটি গঠিত।

রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। সুপ্রাচীনকাল থেকে এই জেলা গৌরবময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ইতিহাসের অধিকারী। এর প্রায় ৮০ শতাংশ তিস্তার প্লাবন ভূমি এবং ২০ শতাংশ বরেন্দ্র ভূমির অন্তর্গত। এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, যমুনা, ধরলা প্রভৃতি নদ-নদী। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ভারতের পূর্বাংশ কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যার অন্তর্গত ছিল বর্তমান রংপুর তথা রঙ্গপুর অঞ্চল। রাজা ভগদত্তের সময় (খ্রিস্টপূর্ব ১৫শ’ অব্দ) রংপুর প্রাগজ্যোতিষের অন্তর্গত ছিল। আবার রাজা সমুদ্র গুপ্তের সময় (৩৪০ খ্রি.) কামরূপের করদ রাজ্যে পরিগণিত হয়। পরবর্তীতে আবার এই অঞ্চল কোচবিহারের কিছু অংশ হিসেবে পরিচালিত হতো। ৪র্থ শতাব্দীর মধ্য থেকে এ অঞ্চল সর্বপ্রথম বর্মা রাজবংশের অন্তর্ভুক্ত হয়। কালক্রমে পালবংশ, সেনবংশ আরও অনেক রাজবংশ এখানে রাজত্ব করে।

রংপুরের বিখ্যাত জায়গা রংপুর জেলার প্রাচীন নিদর্শনগুলো হলো মন্থনার জমিদার বাড়ি, তাজহাট জমিদার বাড়ি, রায়পুর জমিদার বাড়ি, দেওয়ানবাড়ির জমিদার বাড়ি, পায়রাবন্দ জমিদার বাড়ি, মন্থনার জমিদার বাড়ি, পীরগাছা দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ি, ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায়ের রাজবাড়ি, লালদীঘির নয় গম্বুজ মসজিদ, কেরামতিয়া মসজিদ, মাহিগঞ্জের কাজিটারী মসজিদ, মিঠাপুকুর তিন কাতারের মসজিদ, ফুলচৌকি মসজিদ, মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরীর (রহ.) মাজার ও মসজিদ, হযরত শাহজালাল বোখারীর মাজার, হাতীবান্ধা মাজার শরীফ, কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার, কুতুব শাহের মাজার, পাটগ্রামে রাজা নীলাম্বরের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, লালদীঘি মন্দির, চন্দনহাট হরি মন্দির, ডিমলা রাজ কালী মন্দির ও মোগল আমলে খনন করা মিঠাপুকুর, কাউনিয়ার আনন্দমঠ।

২৮ মার্চ ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওমুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ২৮ মার্চ সকাল ৯টার পর থেকে প্রায় ৪০/৫০ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, বল্লম, কুড়াল, খুন্তি, দা, তীর-ধুনকসহ পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে ক্যান্টনমেন্ট মুক্ত করতে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে। ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন রংপুরের অগণিত বীর জনতা। ২৫ মার্চ সারাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এরই প্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করেছিল। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে শত শত মানুষ প্রাণ হারান। পরে তাদের লাশ নিসবেতগঞ্জ বধ্যভূমিতে ফেলে রাখা হয়।ঐতিহাসিক ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবসের বীর শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে রংপুর শহরের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত মডার্ন মোড়ে নির্মিতি স্মৃতি স্তম্ভ “অর্জন”।

নিসবেতগঞ্জ বধ্যভূমিএকাত্তরের ২৩ মে ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন নিসবেতগঞ্জ হাটে ৪০ জনকে গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে পূর্ণ চন্দ্র শঙ্কর ও বণিকের লাশ পাওয়া গেলেও শৈলেন দত্তের লাশ ছিল না। ২৫ মে মধ্যরাতে শহরের গুপ্তপাড়ার বাসা থেকে মুকুল ও চুনিকে তুলে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। পরদিন নিসবেতগঞ্জের বধ্যভূমিতে মুকুলসহ অর্ধশত মানুষের লাশ পড়ে থাকে খোলা আকাশের নিচে।

৭১ সালের ৩ এপ্রিল, শনিবার। রংপুর জেলায় ঘটেছিল এক অকল্পনীয় হত্যাযজ্ঞ। হঠাত করেই মধ্য রাতে দখিগঞ্জ শ্মশানের কাছে গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে আশপাশের মানুষের। রংপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সবার প্রিয় জররেজ ভাই(শহীদ এ্যাডঃ ইয়াকুব মাহফুজ আলী, যিনি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রংপুর শহরের নবাবগঞ্জ বাজারে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন) সহ ১১ জন বাঙ্গালীকে দখিগঞ্জ শ্মশানে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় লাইন ধরে দাঁড় করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে হায়েনার দল।নিমিষেই ঝরে যায় তরতাজা প্রাণ।সেই ধ্বংসযজ্ঞের সময় একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। তিনি গুলিবর্ষণের সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে পড়ে যান এবং তার শরীরের ওপর অন্যরা পড়েছিল বলে তার পায়ে গুলি লাগে। এতে পাক বাহিনী ভাবে তিনি মারা গেছেন। কিছুক্ষণ মৃত আরও দশ জনের সাথে শুয়ে থেকে পাক বাহিনী ঐ এলাকা ত্যাগ করার পরে কোন ক্রমে ঐ এলাকা থেকে বেরিয়ে এসে অন্যদের সহযোগিতায় ভারতে চলে যান। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সেই ব্যক্তি হচ্ছেন রংপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব তাজহাটের দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক (মন্টু ডাক্তার)। তিনি এলাকায় পরিচিতি মন্টু ডাক্তার নামে।সে রাতে দখিগঞ্জ শ্মশানে সৈন্যদের হাতে যারা শহীদ হন তারা হলেনঃ
১) শহীদ এ্যাডঃ ইয়াকুব মাহফুজ আলী (জররেজ),সকলের প্রিয় জররেজ ভাই।২) মোহাম্মদ মহরম৩) শ্রী গোপাল চন্দ্র, ৪) উত্তম কুমার অধিকারী৫)দুলাল মিয়া৬) রফিক আলী৭) সতীশ হাওলাদার৮) দুর্গা দাস অধিকারী ও আরো দু’জন যাদের নাম পাওয়া যায়নি।

রংপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি

শাহ আবদুর রউফ ১৮৮৯ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজনীতি, সমাজসেবা এবং শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বহুমুখী অবদান রেখেছেন।

দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশ ভারতে ইতিহাসে যে কয়জন নারী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে জরিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

মধ্যযুগের বাঙালী কবি হেয়াত মামুদ ১৬৯৩ সালে রংপুর জেলার ঘোড়াঘাটের অধীন ঝাড়বিশিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী। রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অর্ন্তগত পায়রাবন্দ গ্রামে।

বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ এবং প্রথম প্রধান বিচারপতি। তিনি বর্তমান রংপুর জেলায় (তৎকালীন বাংলা প্রদেশের অংশ) ১৯১৬ সালের ৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।

কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায় ১৯০১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বও কাজী পরিবাওে জন্মগ্রহণ করেন। সংস্কৃতিচর্চায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালে রংপুর পৌরসভা কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রংপুর শিল্প ভবনের পক্ষে (অধুনা রংপুর শিল্পকলা একাডেমী) কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াসকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন।

কাজী মোহাম্মদ এহিয়া ১৯২০সালে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় সম্ভ্রামত্ম কাজী পরিবাওে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

জানকীবলস্নভ সেনঃনীলফামারী জেলার ডিমলার জমিদার ছিলেন রাজা জানকীবলস্নভ সেন। ডিমলার জমিদারীর প্রতিষ্ঠাতা হররাম সেন।

রংপুরের মানুষ কেমন? এই জনপদের মানুষ খুবই সহজ সরল এবং অতিথীপরায়ন।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে DailyResultBD.com ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group