জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?
আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত? এ সম্পর্কে একটা ধারণা থাকা প্রত্যেক মানুষের দরকার। এ প্রসঙ্গে একটা গানের কথা মনে পড়ল—‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবে দেখা, দেখা হবে বিজয়ে। ’ এর পরও মানুষ তার লক্ষ্য ও বিশ্বাস অনুযায়ী গন্তব্যে পৌঁছাতে না-ও পারে।
ছোটবেলয় স্কুলে বাংলা ইংলিশ রচনা লেখায় আমরা দুর্দান্ত সব জীবনের লক্ষ্য লিখতাম। ডাক্তার হবো, শিক্ষক হব, মহাকাশচারী হব। ছোটখাটো কিছু হবো না.হতে হয় তো রাজাই হব। কিন্তু আমরা ক’জন তেমন হতে পেরেছি ? হতে পারিনি কারণ আমাদের লক্ষ্য তেমনভাবে স্থির ছিল না, জোরদার ছিল না । শুধু রচনা লিখতে হবে এবং ভালো কিছু লিখতে হবে বলেই ওসব ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া।
আমাদের বেশিরভাগেরই জীবনের সেরকম বিশেষ একটা লক্ষ্য থাকেনা। পরিস্থিতি যেদিকে নিয়ে যায় আমরা সেদিকেই চলে যাই। আবার মা বাবা যেমন বলেন লক্ষ্য সেদিকেও স্থির করি।
কিন্তু সত্যি যদি জীবনের কোন বিশেষ লক্ষ্য থাকে তাহলে সেটা সফল করাটা কঠিন না। সফল হওয়ার পথ অনেক আছে তবে নিশ্চয়ই সেগুলো কন্টকপূর্ণ । লক্ষ্য স্থির করলাম আর লক্ষ্যে পৌঁছে গেলাম সেটা হবার নয়। জীবনটা সিনেমা নয় যে প্রথম সীনে অমিতাভ বচ্চন মাটি কোপালো আর পরের সীনে রিভলভিং চেয়ারে বসে বিশাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিক হয়ে গেল। প্রথম আর দ্বিতীয় সীনের মাঝখানে যে সংঘর্ষ, পরিশ্রম আর জেদ আছে সেটা জানতে হবে, বুঝতে হবে।
যাইহোক, লক্ষ্য স্থির করার আগে কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা জরুরি বা জীবনের লক্ষ্য কিভাবে ঠিক করব?
সত্যি সত্যিই সেটা আপনার জীবনের লক্ষ্য কিনা ?
লক্ষ্যটা যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে না হয়।
নিজের শারিরীক , মানসিক ,অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং মেধা কতটুকু সেটা ভাল করে বুঝে নিয়ে লক্ষ্য স্থির করুন।
লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যা যা কষ্ট স্বীকার করতে হবে তার জন্য আপনি কি প্রস্তুত?
আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে জীবনের একটি পথ রুদ্ধ হয়ে গেলেও মানুষকে কখনো তার বিশ্বাস ও স্বপ্নকে হারালে চলবে না। পৃথিবীতে মানুষের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। মানুষ অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে, তবে সেটি নৈতিকতার নিরিখেই হতে হবে। তা যেন তার ব্যক্তিত্ব, মানবিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনসত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে। বেশি লোভ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেন মানুষের মরণফাঁদে পরিণত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তবেই মানবজীবন সার্থক হবে।
আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি? আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহা সাফল্য’ (সূরা তাওবাহ, আয়াত-১১১)।
কর্ম জীবনের লক্ষ্য কি? জীবনের সব কর্মের সূচনায় এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে স্মরণ করুন এবং এরই দাবি অনুসারে ওই কাজটি সম্পন্ন করুন। আপনার কাজটি হয়ে উঠবে অর্থপূর্ণ ও মহিমাপূর্ণ। মনে রাখবেন, মানুষের জীবন নিত্য পরিবর্তনশীল। সুখ-দুখ, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, সুস্থতা-অসুস্থতা, সফলতা-ব্যর্থতা ইত্যাদি নানা অবস্থা নিয়েই জীবন। এই নানা রূপ-অবস্থার মধ্য দিয়েই জীবন এগিয়ে চলে এবং সময় ফুরোতে থাকে। জীবনের অনভিপ্রেত অবস্থাগুলোকে জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায় না। এগুলো জীবনেরই অংশ। এই অবস্থাগুলোও কি মহিমান্বিত ও কল্যাণপূর্ণ হতে পারে? এমন কোনো উপায় কি আছে, যার দ্বারা জীবনের এই অংশটিও ইতিবাচক হতে পারে? সঞ্চয়ের খাতায় কিছু যোগ করতে পারে? হ্যাঁ, সেই উপায়ও আছে এবং তা মুমিনের জন্য।
মুমিনের শুধু কর্ম নয়, তার জীবনের সব অবস্থাই হতে পারে মহিমাপূর্ণ ও কল্যাণপূর্ণ। ‘অবস্থা’ বলতে জীবনের ওই সব অনুষঙ্গ যা সরাসরি কর্ম নয়, তবে এর সঙ্গেও রয়েছে বিশ্বাস ও কর্মের সংযোগ। যেমন সুখ-দুখ, সুস্থতা-অসুস্থতা ইত্যাদি। এই সব অবস্থাও কল্যাণপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং যথার্থ বিশ্বাস ও কর্মের দ্বারা।