সেশনজট নিরসনে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের
সেশনজট নিরসনে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের । নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে শুধু সম্মান শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের মতে, এ দুই স্তরের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশের প্রকৌশল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষাবর্ষের শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নিয়ে নিতে পারে। কেননা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ব্যবস্থা না নিলে সেশনজটের অধিক ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। সংবাদ সংস্থা বাসস এ খবর জানিয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবতে হবে, তারা অন্তত শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাটা নিতে না পারলে সেশনজটের বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। বাকি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পরামর্শ হচ্ছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেশনজট কমিয়ে আনতে অন্তত একটি সেমিস্টার কমিয়ে আনা যায় কিনা, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এক মাস পর থেকে অনলাইন ক্লাস চালু করতে পারত। এতে হয়তো বা প্রকৌশল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না; তবে এতে তারা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অথবা বিকল্প কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারত। এতে যারা শিক্ষাজীবন শেষ করতে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে হতাশা কম হতো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা শেষ করতে ছয় মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে তাঁদের কর্মজীবন শুরু করার ওপরেও।
শিক্ষার্থীদের সেশনজট ভীতির বিষয়ে বাসস জানিয়েছে, সম্মান শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিলে এবং বছরের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি নিলেও সেশনজট ঠেকানো যাবে না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস তাঁদের সব প্রত্যাশা নস্যাৎ করে দিচ্ছে এবং একই অবস্থা হয়েছে প্রকৌশল ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে।
এমনকি ছয় মাসের সেমিস্টার যদি চার মাসে এবং এক বছরের সেমিস্টার যদি ১০ মাসে শেষ করে, তা হলেও শিক্ষার্থীদের বাকি লেখাপড়া শেষ করতে যথাক্রমে আরো আট মাস ও দশ মাস সময় লাগবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি পরীক্ষা গ্রহণে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তা হলে সেশনজট থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। কমপক্ষে এক বছরের ক্ষতি হয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম একই অভিমত প্রকাশ করে বলেন, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শেষ বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হবে একটি ভালো সমাধান।
অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমাদের করোনা আরো দীর্ঘ সময় মোকাবিলা করতে হবে। এই দীর্ঘ সময় আমাদের শুধু ঘরে বসে না থেকে সবকিছুতে স্বাভাবিক চিন্তা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই প্রয়োজনে কোভিড টেস্ট করাতে পারে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর পর শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী বিনা প্রয়োজনে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে না পারে, সেটিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। এটা না করতে পারলে তা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হতে পারে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারাও বিভিন্ন বিভাগকে এ ধরনের স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, স্নাতক সম্মান শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব ইতিবাচক এবং সেশনজট বন্ধে এটি একটি ভালো সমাধান। সব বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলতে এ পদ্ধতি গ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত ছিল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, কোর্স ও সিলেবাস কমানো মোটেও ঠিক হবে না। এতে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০টি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শেষ বর্ষের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এসব পরীক্ষা গত মার্চ-এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। তাঁদের শেষ বর্ষের পরীক্ষার সময় অনেক আগেই শেষ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। চবি কর্তৃপক্ষ এখনো পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘ সেশনজটের ভীতি কাজ করছে।
NTV Online