সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি লটারি ১০ ডিসেম্বর, বেসরকারিতে ১৩
সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি লটারি ১০ ডিসেম্বর, বেসরকারিতে ১৩। পরে ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সরকারি স্কুলের ভর্তির লটারি। আর ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বেসরকারি স্কুলের ভর্তির লটারি। কোনো স্কুল ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারবে না, থাকবে না পরিচালনা পর্ষদের কোনো কোটা। সরকারি-বেসরকারি সব স্কুলেই নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগের মতোই থাকছে ভর্তি ফি। সে অনুযায়ী রাজধানীর এমপিওভুক্ত স্কুলে ভর্তি ফি পাঁচ হাজার, নন-এমপিওতে সর্বোচ্চ ৮ হাজার এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে। আর অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরে তিন হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না।
এদিকে আগামী বছর বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য টেলিটকের ওয়েবসাইটে সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোর তথ্য হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। আগামীকাল ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ওয়েবসাইটে https://gsa.teletalk.com.bd প্রবেশ করে মহানগরী ও জেলা সদরের সদর উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোর তথ্য আপলোড করতে বলা হয়েছে।
১২ দিন সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন নেয়া হবে। ২৯ বা ৩০ ডিসেম্বর সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হবে লটারি। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে ভর্তি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আবেদনের ফি ৫৫ টাকা কমছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো খসড়া নীতিমালায় এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে আজ বা রোববার বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাশাপাশি দেশের সাড়ে ৩ শতাধিক সরকারি হাইস্কুলেও একই সময়ে ভর্তির আবেদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তবে এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে লটারির তারিখ নির্ধারণের সুযোগ থাকছে। জেলা স্কুলের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন (মাধ্যমিক-২) বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুরক্ষা বিবেচনায় আবেদন প্রক্রিয়াসহ ভর্তি পর্যন্ত সার্বিক কার্যক্রমে কিছু নতুনত্ব আনা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য বছরের মতোই টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে ভর্তির আবেদন নেয়া হবে। ঢাকা মহানগরের ৪৪টি এবং ঢাকার বাইরের সাড়ে তিনশ’ হাইস্কুলের আবেদন একসঙ্গে নেয়া হবে। করোনা ঝুঁকির কথা বিবেচনায় সরাসরি লটারি না করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর পরিবর্তে সফটওয়্যারের মাধ্যমে লটারির প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তির সুবিধার্থে ঢাকার স্কুলগুলোকে এবারও তিনভাগে ভাগ করা হবে। তবে একজন শিক্ষার্থী একটি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পছন্দক্রমে দিতে পারবে।
এবারও রাজধানীর মোট ১৭টি হাইস্কুলে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বাকি স্কুলগুলোর কোনোটি দ্বিতীয় আবার কোনোটিতে তৃতীয় বা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এবার প্রথম শ্রেণিতে প্রায় ২ হাজার এবং অন্য শ্রেণিতে প্রায় ১৩ হাজার আসন আছে। তবে মাউশি মনে করছে, এবার কোনো অনুত্তীর্ণের বিষয় না থাকায় শেষ পর্যন্ত মোট আসন সংখ্যা কমতে পারে। কেবল প্রথম, তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে আগের মতো আসন শূন্য পাওয়া যেতে পারে।
প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী নেয়া স্কুলগুলোর মধ্যে আছে আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমণ্ডি গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়, ধানমণ্ডি গভ. বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমণ্ডি গভ. বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়ের ফিডার শাখা, তেজগাঁও বালক উচ্চবিদ্যালয়, তেজগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল বালক উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুল, খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুলের ফিডার শাখা, নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত উচ্চবিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। প্রথম শ্রেণির ভর্তিতে শিক্ষার্থীর বয়স জানুয়ারিতে ছয় বছরের বেশি হতে হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, এবার স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট আসনের ৫০ শতাংশ এলাকা কোটা থাকবে। গত বছর এটি ৪০ শতাংশ ছিল। এ ছাড়া ‘সরকারি প্রাইমারি স্কুল’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘প্রতিবন্ধী’ ও ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী’ কোটা রাখার প্রস্তাব আছে।
গণভবন উচ্চবিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ২ শতাংশ কোটা গণভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে আপন ভাই বা বোন পড়লে তার অনুজ ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন; তবে ভর্তির শর্ত পূরণ করতে হবে। কোটায় ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরদিন সকাল ১০টায় উপস্থিত হয়ে প্রমাণ দাখিল করতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলে। গত বছর ভর্তি ফরমের দাম ১৭০ টাকা ছিল। এবার তা কমিয়ে ১১৫ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে।
মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, এবার পরীক্ষা হচ্ছে না। এ কারণে পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয় নেই। আবার লটারির কারণে কিছু ব্যয় বাড়বে। উভয় দিক বিবেচনায় আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মাসের মধ্যে শিক্ষার্থী নির্বাচন শেষ করা হবে। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২৫ নভেম্বর জানান, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর জন্য প্রতি শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যান্য বছর প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে এবং নবম শ্রেণিতে জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হতো। আর দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। লটারিতে ভর্তির এ সিদ্ধান্তে সর্বোপরি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ফি মওকুফ : আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। সরকারি স্কুলগুলোর ফি-র আওতা এক হাজার টাকার কম। আর বেসরকারি স্কুলগুলো সেশন চার্জসহ অন্তত সাত ধরনের ফি নিতে পারবে না। এসব ফি না নিতে এরইমধ্যে স্কুলগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।