জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজের সেরা শিক্ষার্থীরা এখন কোথায়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজের সেরা শিক্ষার্থীরা এখন কোথায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ‘পারফরম্যান্স র্যাঙ্কিং’ এ টানা চারবারই রাজশাহী কলেজ দেশসেরার স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে সেরা কলেজের সেরা শিক্ষার্থীরা কে কোথায় কি অবস্থায় রয়েছে সেই বিষয়ে আজকের প্রতিবেদন। বাংলা, পদার্থবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, রসায়ন, প্রাণিবিজ্ঞান, ইংরেজি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩৫ শিক্ষার্থীর অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এই শিক্ষার্থীরা ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম হয়েছেন। কেউ কেউ সামগ্রিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলেও হয়েছিলেন প্রথম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ৩৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিসিএস সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন একজন, সরকারি হাইস্কুলে চাকরি করছেন একজন। এ ছাড়া ব্যাংকে চাকরি করছেন একজন, অন্যান্য সরকারি চাকরিতে তিনজন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন, বেসরকারি হাইস্কুলে ছয়জন, বেসরকারি কলেজে চারজন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কাজ করছেন একজন। গৃহিণী দুজন। একজনের নিজস্ব ব্যবসা আছে। আটজন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একজন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আর একজন এখনো পড়ালেখা করছেন।
কাকলী রানী ২০১৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন,ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৬৯। স্নাতকোত্তরে হয়েছিলেন তৃতীয়। ৪০তম বিসিএসে তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
হাবিবা খাতুন ২০১৮ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। স্নাতক (সম্মান) এর ফলে তিনি কলেজেও প্রথম হয়েছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলে প্রথম হয়েছেন, ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার র্যাঙ্কিং তিনি জানতে পারেননি। তবে তাঁর সিজিপিএ ছিল ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৯২। স্নাতকে ৩ দশমিক ৮১। স্নাতকোত্তরের ফল বের হওয়ার আগেই তিনি রাজশাহী নগরের মুসলিম হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
রাশেদুল ইসলাম রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১৮ সালে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৬৩। নওগাঁর এই তরুণ এখন একটি সফটওয়্যার কোম্পানির নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। তিতাস গ্যাস কোম্পানির হিসাব শাখায় পরীক্ষা দিয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় টিকেছেন। এখন মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদেও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
সামিনা তাসনিম শুধু রাজশাহী কলেজে নয়, পদার্থবিজ্ঞানের এই ছাত্রী ২০১৭ সালে পুরো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে সেরা হয়েছিলেন। সিজিপিএ ছিল ৪-এ ৪। সামিনার বাড়ি রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকায়। এসএসসি ও এইচএসসিতেও সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। পড়ালেখা শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের শিক্ষানবিশ অফিসার পদে চাকরি পেয়েছিলেন।
ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে ‘ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার’ হিসেবে কর্মরত মো. আবদুল্লাহ আল নোমান জানান রাজশাহী কলেজ কেন সেরা,আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি কলেজের বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার সুযোগ পেয়েছি; যেমন বিতর্ক, ছায়া জাতিসংঘ, ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং, স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিংসহ বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক ও জ্ঞানচর্চামূলক সংগঠনে কাজের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।
ব্যাংক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. শফিক কামালও বললেন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুফলের কথা। বলছিলেন, ‘আমার বিভাগের একটা ক্লাবের কথাই বলি—স্ট্যাটিসটিক্যাল পাইওনিয়ার ক্লাব। ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ক্লাবটি যাত্রা শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু দক্ষতা গড়ে তোলা। ক্লাবটি প্রতিবছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ক্লাবের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নানা পদে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমেই কিন্তু ওরা দায়িত্বশীল হতে শেখে।