নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় আগামী বছর থেকে এসএসসি পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টার
আগামী বছর থেকে এসএসসি পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টার । আগামী বছর থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা তিন ঘণ্টার পরিবর্তে হবে পাঁচ ঘন্টা। ২০২৫ সালে এ পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী। এতে মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে পাঁচ ঘণ্টায়। দীর্ঘ এ সময়টা পরীক্ষার হলেই অবস্থান করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। অবশ্য মাঝে বিরতি পাবেন তারা।
আগামী বছর দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা মোট ১০টি বিষয় পড়বে। বিষয়গুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। এই পাঠ্যসূচির ওপরই অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। বিষয়ের চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক কাজ, সমস্যা সমাধান, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে পরীক্ষার্থীদের। মূল্যায়নে অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় থাকবে।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষাই থাকছে। তবে এই পরীক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়নের ধরন এখনকার মতো থাকছে না।
নতুন ব্যবস্থায় মূল্যায়ন হবে কার্যক্রমভিত্তিক এবং লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। কার্যক্রম হলো অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। এর মাধ্যমে হাতে-কলমে যে মূল্যায়ন হবে, তার ওয়েটেজ বা গড় ভারিত্ব হবে ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৫০ শতাংশ। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর মধ্যে মিল রেখে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি যে সুপারিশ তৈরি করেছে, তাতে এ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কমিটি তাদের এই সুপারিশ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেবে। তারপর আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পূর্বনির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় অনুমোদনের জন্য তা তোলা হবে। সেই কমিটির অনুমোদন পেলে নতুন মূল্যায়ন কাঠামো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বর্তমানে প্রাথমিকে প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে অধ্যয়ন করছে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ে, তারা নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
কমিটির সুপারিশে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা রাখা এবং এই দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের বিষয়বস্তুর আলোকে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন হবে, যা সৃজনশীল উপায়ে উত্তর লিখতে হবে। এ জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও সেভাবে প্রণয়ন করা হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের ফলাফলের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে একটি অ্যাপে, যেটির নাম ‘নৈপুণ্য’। কমিটি বলেছে, চূড়ান্ত মূল্যায়নপদ্ধতি অনুসারে নৈপুণ্য অ্যাপও হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিটি বিষয়ে মিডটার্ম ও বার্ষিকের মতো চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টার। এই সময়ে ছয়টি সেশন হবে। প্রথম চার ঘণ্টা ব্যবহারিক ও এক ঘণ্টা তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষার মূল্যায়ন করবে শিক্ষা বোর্ড।পরীক্ষার মাঝখানে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে। দিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলবে। এতে ছয়টি সেশন থাকবে। চার ঘণ্টা থাকবে ব্যবহারিক।
পাঁচ ঘণ্টার এই সেশনগুলোতে একজন শিক্ষার্থীকে দলগতভাবে কাজ করতে হবে।
আবার প্রত্যেককে এককভাবে ব্যবহারিক কাজও করতে হবে। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা বা মূল্যায়ন কেন্দ্র হবে শিক্ষার্থীর নিজ প্রতিষ্ঠানেই। আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য যেতে হবে নিজ স্কুলের বাইরের ভিন্ন কেন্দ্রে।
আগামী জুন মাস এই মুল্যায়ন পদ্ধতি চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, আমরা ঘণ্টা বাজিয়ে পরীক্ষা শুরু আবার ঘণ্টা বাজিয়ে শেষ এমন গতানুগতিক কোনো পরীক্ষায় যাচ্ছি না। আর এটাকে ‘পরীক্ষা’ও বলতে চাইছি না। এটাকে আমরা মূল্যায়ন বলছি।
পরীক্ষার জন্য মার্কিং সিস্টেম থাকবে না। মূল্যায়নকারীরা ফলাফলকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করবে (রিপোর্টিং ভালো, অর্জনের পথে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে)। চতুর্থ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছরের জন্য মিডটার্ম এবং ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের শুধু চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বলেন, আগামী জুন মাস থেকেই স্কুলগুলো এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবে। এর আগেই সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। পাঁচ ঘণ্টায় প্রতিটি বিষয়ের ওপর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এছাড়া কারিকুলাম অনুযায়ী ধারাবাহিক মূল্যায়ন তো থাকবেই।
পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ নিয়ে আমরা এই খসড়া তৈরি করেছি। এটি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে আমরা উত্থাপন করেছি। তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।