এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১

এইচএসসি এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১ সালের ইতিহাস (৭ম সপ্তাহ) এসাইনমেন্ট -৫ HSC History Assignment Solution / Answer 2021

এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১ 1

এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও প্রকৃতি এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব

ক নং প্রশ্নের উত্তর

ক ) ভাষা আন্দোলনের পটভূমিঃ

১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হয় । তৎকালীন পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণত হয় । পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ইতিহাস , ঐতিহ্য , ভাষা , সংস্কৃতি কোনাে কিছুরই মিল ছিল না । পাকিস্তান জন্মের শুরু থেকেই দুই অংশের মধ্যে ছিল চরম বৈষম্য । পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানকে তথা বর্তমান বাংলাদেশকে শাসন ও শােষণ ‘ করতে থাকে । প্রথমে পশ্চিমা শাসক গােষ্ঠী বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে । তারা বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চায় ।

১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার পল্টন ময়দানে ঘােষণা করেন “ উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা ” । এ ঘােষনার পর পূর্ব বাংলার ছাত্র – জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য তারা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে । ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদ অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন দত্ত । জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিমউদ্দিন জিন্নাহর কথার পুনরাবৃত্তি করেন । ফলে ছাত্র – সমাজ তীব্র প্রতিবাদ শুরু করে ।

সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সারা পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট আহবান ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়ােজন করে । পুলিশ ছাত্রদের মিছিলের উপর গুলি চালায় । পুলিশের গুলিতে সালাম , বরকত , রফিক , সফিউর , জব্বারসহ কয়েকজন শহীদ হন । হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ব বাংলা । শুরু হয় মাতৃভাষার অধিকার আদায় ও বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম । অবশেষে বাঙালি জাতি বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে ।

 

খ নং প্রশ্নের উত্তর

খ ) ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদদের অবদানঃ

ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদদের অবদান অপরিসীম । ভাষ শহীদদের রক্তের বিনিময়েই বাংলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে । যখন নিজেদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নেওয়ার মতাে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চালিয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা , তখন পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ প্রতিবাদে সােচ্চার হয়ে উঠেছে । ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য তারা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ।

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে চূড়ান্ত পর্যায়ে সালাম , বরকত , রফিক , সফিউর , জব্বারসহ আরাে অনেকে তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন রাজপথে । যার ফলে প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ব বাংলা । শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদের তীব্রতার মুখে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় । তাই বলা যায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে ভাষা শহীদদের অবদান অনস্বীকার্য ।

 

গ নং প্রশ্নের উত্তর

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বঃ

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ ঘটনা । পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ , বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা । ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের অবহেলা , বঞ্চনা , শােষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল ।

মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবল নাড়া দিয়েছিল । তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের হাতে তাদের ভাষা , সংস্কৃতি , অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয় । বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সমস্ত পূর্ববাংলার বাঙালিরা একত্রিত হন । এতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে । তারা বুঝতে পারেন ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে না নামলে অধিকার আদায় করা সম্ভব নয় ।

তাই পূর্ব বাংলার সমস্ত জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের মাতৃভাষাকে রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । বুকের তাজা রক্ত ঝরাতে ও পিছপা হননি । এভাবেই বাঙালির মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপিত হয় । যা পরবর্তীতে স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছিল ।

 

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ভাষা আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকাঃ

আটচল্লিশ ও বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন এদেশের নারী সমাজের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল । মিছিল , স্লোগান , সভা – সমিতিতে তারাও পুরুষের পাশাপাশি সংগ্রাম করেছেন । ঢাকার বিভিন্ন স্কুল – কলেজ , বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা বেগমসহ আরও অনেকে পােস্টার , ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ।

ঢাকার বাইরেও নারী সমাজের ভূমিকা ছিল সক্রিয় এবং প্রতিবাদী । যশােরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন হামিদা রহমান । বগুড়ার বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন রহিমা খাতুন , সালেহা খাতুনসহ অনেকে । ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল । এ আন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রাখেন হাজেরা মাহমুদ , যােবেদা খাতুন চৌধুরী , শাহেরা বানু , সৈয়দা লুফুন্নেছা খাতুন , সৈয়দা | নাজিরুন্নেছা খাতুন , রাবেয়া খাতুনসহ আরও অনেকে।

 

ঙ নং প্রশ্নের উত্তর

বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকায়নঃ

বাংলা ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমলে , সে ধারারই সার্থক পরিণতি হলাে আমাদের মাতৃভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি । আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার – এ বসবাসরত Mother Language Lover of the World নামের একটি বহুভাষী ও বহুজাতিক ভাষাপ্রেমী গ্রুপ ১৯৯৮ সালের ২৮ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান – এর কাছে একটি আবেদনপত্র পেশ করে ।

যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও তার সহযােগী আব্দুস সালাম । জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির ২৭ ধারার উপর ভিত্তি করে তারা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন যে , দক্ষিণ আমেরিকা , এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের অসংখ্য জাতিগােষ্ঠীকে মাতৃভাষা ব্যবহার না করার জন্য , মাতৃভাষা ভুলে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে যা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ ’ – এর সরাসরি লভঘন । পত্রে তারা প্রতিটি জাতিগােষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য বাঙালির ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত পটভূমি তুলে ধরেন । যা সারা পৃথিবী জুড়ে অনন্য । তারা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান । যাতে প্রতিটি জাতিগােষ্ঠী তাদের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানাের জন্য একটি বিশেষ দিবস পাবে । এ আবেদনে বিভিন্ন ভাষাভাষী ১০ জন স্বাক্ষর করেন ।

এ আবেদনের বিষয়টি বাংলাদেশের তল্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত হলে এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ | গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবকে প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা দেন । ফলে অতি দ্রুততার সাথে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন , শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমােদনক্রমে প্রস্তাবটি টি যথাসময়ে পেশ করে ।

ইউনেস্কো তথা জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রস্তাবটি মেনে নেয় । ২৮ টি রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রস্তাবে লিখিতভাবে সমর্থন জানায় এবং Draft Resolation – 35 হিসেবে চিহ্নিত করে এক্সিকিউটিভ বাের্ডে প্রেরণ করে । ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সর্বসম্মতিক্রমে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করে এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রকে দিবসটি উদযাপনের জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয় । ফলে ১৯৫২ সাল থেকে যে ২১ শুধু আমাদের ছিল , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অহংকার বাঙালির ভাষা বিশ্বসভায় আসন করে নেয় ।

বাংলাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট ‘ । ২০১০ সাল থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘ হিসেবে পালিত হচ্ছে । এখন ২১ শে ফেব্রুয়ারি বা বাংলাভাষা শুধু বাংলাদেশের মানুষের কথা বলে না , কোনাে একটি জাতি – গােষ্ঠীর মাতৃভাষার কথা বলে না । সকল দেশ , সকল জাতির মাতৃভাষারও প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাভাষা ।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে DailyResultBD.com ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group