এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১

এইচএসসি এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১ সালের পৌরনীতি ও সুশাসন (৭ম সপ্তাহ) এসাইনমেন্ট -৫ HSC Politics and Good Governance Assignment Solution / Answer 2021 HSC Civics Assignment Solution / Answer 2021

এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১ 1

এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১

সংসদীয় সরকারের ব্যবস্থা অধিকতর গণতান্ত্রিক-যৌক্তিকতা নিরুপণ

ক . গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য :

গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে জনগণের শাসন । অতীত ও মধ্যযুগে গণতন্ত্র মূলত এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে । কিন্তু আধুনিক যুগে গণতন্ত্র বলতে আমরা কেবল এক ধরনের সরকারকেই বুঝিনা , সাথে সাথে এক ধরনের সমাজ ব্যবস্থাকেও বুঝি । এ ধরনের সমাজব্যবস্থা যেখানে বিরাজমান নেই সেখানে শাসনপ্রথা গণতন্ত্র নামে পরিচিত হলেও তা সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক নয় । তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গণতন্ত্র বলতে আমরা এক প্রকার । শাসন ব্যবস্থাকে বুঝি । প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে গ্রীক ঐতিহাসিক হিরােডােটাস ( Herodotus ) গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলেছেন , গণতন্ত্র এক প্রকার । শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসন ক্ষমতা কোন শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহের উপর ন্যস্ত থাকে না , বরং সমাজের সদস্যগণের উপর ন্যস্ত হয় ব্যাপকভাবে । ” এর প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই আধুনিককালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ লর্ড ব্রাইসের সংজ্ঞায় ।

গণতন্ত্র সম্পর্কে লর্ড ব্রাইস বলেন , “ যে শাসন প্রথায় জনসমষ্টির অন্তত তিন – চতুর্থাংশ । নাগরিকের অধিকাংশের মত শাসনকার্য পরিচালিত হয় , তাই গণতন্ত্র । এক্ষে এটাও উল্লেখযােগ্য যে । নাগরিকদের ভােটের শক্তি যেন তাদের শারীরিক বলের সমান হয় । গণতন্ত্রের কতকগুলাে বৈশিষ্ট্য রয়েছে । কোন শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক কিনা তা এসব বৈশিষ্ট্যের মানদন্ডে বিচার করে সহজেই আমরা অনুধাবন করতে পারি।

প্রথমত , লক্ষ্য করতে হবে উক্ত শাসনব্যবস্থায় প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয় কিনা ;

দ্বিতীয়ত , নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকে পরিবর্তন করা যায় কিনা ;

তৃতীয়ত , উক্ত ব্যবস্থায় দল গঠন , মত প্রকাশ ও সমালােচনার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে কিনা ;

চতুর্থত , জাতি – ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের স্বার্থরক্ষার সুবন্দোবস্ত রয়েছে কিনা ,

পঞ্চমত , উক্ত ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযােগী রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারসমূহ আইনগতভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে কিনা ; এবং শেষত , জনসাধারণ এ আশ্বাস পেয়েছে কিনা যে , সুষ্ঠু বিচার ছাড়া তাদের অহেতুক বন্দীদশা ভােগ করতে হবে না , অথবা অন্য কোন শাস্তি ভােগ করতে হবে না ।

উল্লেখিত ব্যবস্থাসমূহের উপস্থিতি যে – কোন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করতে সমর্থ । বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সলটু ( Soltau ) বলেন , গণতন্ত্রের মধ্যে চার সত্য অনুধাবনযােগ্য । প্রথমত , গণতন্ত্রে প্রত্যেকের স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন্মগত অধিকার স্বীকার করা হয় ; দ্বিতীয়ত , গণতন্ত্রের রাষ্ট্রকে কোন অভ্রাড় সত্যের প্রতীক বলে গ্রহণ করা হয় না , তৃতীয়ত , রাজনৈতিক অধিকারে ক্ষেত্রে ও আইনের চোখে সবাই সমান ; চতুর্থত , গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সকলের মতামতের দ্বারা অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে । এ চারটি উপাদানের সুসমন্বয়ে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় , তাগণতান্ত্রিক । সুতরাং গণতন্ত্রে মৌলিক কথা হচ্ছেশাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে শাসিতদের সম্মতি লাভ ।

 

খ. সংসদীয় সরকার ও এর বৈশিষ্ট্য :

আইনবিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে আধুনিক গণতান্ত্রিক সরকারগুলােকে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার – এ দুশ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় । সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে মন্ত্রিপরিষদের উপর । মন্ত্রিসভার সদস্যগণ আইন । সভার নিকট দায়ী থাকেন । মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের মূল কথা হল এই যে শাসন বিভাগ এর । কার্যাবলীর জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকবে ।

সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ :

★ দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা : সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত ভাবে সব কাজ কর্মের জন্য আইন – সভার কাছে দায়ী থাকেন । মন্ত্রীগণ তাদের কার্যকলাপের ব্যাপারে আইন সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবদিহি করতে বাধ থাকেন । আইন সভার আস্থা হারালে মন্ত্রিপরিদের পতন ঘটে।

★ নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান : সংসদীয় সরকারের একজন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান । থাকেন । প্রধানন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকরী । প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান কিছুই করতে পারে না ।

★প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব : এ ধরণের শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সরকারের সর্বাপেক্ষা গুরুপূর্ণ ব্যক্তি । তিনি মন্ত্রিপরিষদের । প্রধান । তার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা দেশ শাসনের দায়িত্ব পালন করে ।

★বিরােধী দলের অস্তিত্ব ; আইন সভায় বিরােধী দলের অস্তিত্ব থাকে । আইভর জেনিং – এর মতে সংসদীয় সরকারের ক্ষেত্রে । বিরােধী দলের অস্তিত্ব অপরিহার্য । তারা সরকারের সমালােচনার মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারিতা রােধ করতে পারে।

★ নমনীয় সংবিধান : সংসদীয় সরকার সাধারণত নমনীয় প্রকৃতির হয় । হয় জনপ্রতিনিধি , শাসন বলে সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় ।

★দলীয় শাসন : সংসদীয় সরকার হচ্ছে দলীয় শাসন ব্যবস্থা , সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট দল সরকার গঠন করে ।

★আইনসভার প্রাধান্য : এ সরকারে আইনসভার প্রধান্য স্বীকার করা হয় । এটি যে কোন ধরনের আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশােধন করতে পারে । মন্ত্রিসভার সদস্যরা আইনের বিল ও বাজেট প্রস্তাব করে ।

 

গ , রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও এর বৈশিষ্ট্য :

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে চূড়ান্ত শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে । রাষ্ট্রপতি তার কাজকর্মের জন্য আইনসভার নিক দায়ী থাকেন না । এ ধরণের শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রকৃত শাসক , তাকে সাহায্য করার জন্য একটি মন্ত্রিপরিষদ থাকে । এ মন্ত্রিপরিষদের দায় – দায়িত্ব শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির নিকট । শাসনতন্ত্র কর্তৃক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও মর্যদা সংরক্ষিত হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ । রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার কতগুলাে বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে অন্য ব্যবস্থা থেকে পৃথক করেছে । যেমন ;

★এই শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান । রাষ্ট্রপতিই প্রকৃত শাসক এবং আইনগত দিক থেকে তিনি প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ।

★রাষ্ট্রপতি আইনসভার সদস্য নন এবং আইন সভার নিকট দায়িত্বশীলও নন । তবে আইন সভার গৃহীত বিলে ভেটো দাগের ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারেন ।

★ সাধারণত : রাষ্ট্রপতি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত

★রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ক্ষমতার মূলত : স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ তাদের পৃথক পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখে ।

★ এ ব্যবস্থায় সংবিধান সাধারণত লিখিত ও দম্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে ।

★এ শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ রাষ্ট্রপতির বিষন্তকর্মচারী হিসেবে দায়িত্বপালন করে থাকেন । তারা । আইন সভার কাছে দায়ী নন । মন্ত্রীরা তাদের কাজ কর্মের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকেন ।

 

ঘ. সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পার্থক্যঃ

প্রথমত ; সংসদীয় সরকার রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন নিয়মতান্ত্রিক । যেমন , ইংল্যান্ডের রাজা বা রাণী । এ শাসন ব্যবস্থার তিনি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধ প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী । কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের । রাষ্ট্রপ্রধান প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী । তাকে ঘিরেই শাসন কার্য আবর্তিত হয় । যেমন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট । তিনি রাষ্ট্রের প্রধান এবং সরকারের প্রধান ।

দ্বিতীয়ত : সংসদীয় সরকারে মন্ত্রিপরিষদ আইনসভার সদস্য এবং তারা তাদের কার্যাবলীর জন্যে আইনসভার । কাছে দায়ী থাকেন । কিন্তু | রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি আইনসভার সদস্য নন এবং তিনি কারও কাছে দায়ী থাকেন না । সংবিধান বা শাসনতন্ত্র তার ক্ষমতার উৎস ।

তৃতীয়ত : রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হন । মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে তাকে সহজে অপসারণ বা পদচ্যুত করা যায় । । তাকে অপসারণ করতে বিচার বিভাগীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় , যা জটিল ও সময় সাপেক্ষ । সংসদীয় সরকারে আইন সভায় অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করে মন্ত্রিসভাকে অপসারণ করা যায় । আর রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেও আইনসভা ভেঙে দিতে পারেন । রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় বা সম্ভব নয় ।

চতুর্থত : সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী আইন সভার সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা এবং অন্যান্য মন্ত্রীরাও আইনসভার । সদস্য । এখানে আইন সভা ও নির্বাহী বিভাগ মিলে মিশে কাজ করে , মন্ত্রিপরিষদ উভয় বিভাগের সদস্য হওয়াতে এই সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে । কিন্তু রাষ্ট্রপতি । শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি এবং তার নিযুক্ত মন্ত্রিসভা।

নির্বাহী বিভাগের প্রধান সদস্যবর্গ , আইনসভার সদস্য নন । এজন্য রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসরণ করা হয় । শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ পরস্পর স্বাধীন কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে বিভাগীয় ঐক্যই মূল বৈশিষ্ট্য । অপরদিকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রিপরিষদ আইনসভার নিকট দায়িত্বশীল নন ।

পঞ্চমত : সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভার সদস্যরা আইন সভার সদস্য হওয়ায় বিভিন্ন বিল উত্থাপন করতে পারেন , বাজেট পেশ করেন এবং অন্যান্য কাজে । অংশগ্রহণ করতে পারেন । কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত । সরকারের মন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতির ইচ্ছানুযায়ী নিযুক্ত হন এবং পদচ্যুত হন । তারা রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ ও আজ্ঞাবাহী কর্মচারী মাত্র । রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর তারা তাদের পদে বহাল থাকেন ।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে DailyResultBD.com ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group