BOU SSC 2nd Year Humanities 3rd Assignment Answer 2021 উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসি এসাইনমেন্ট 2021, বাউবি দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক শাখার ৩য় এসাইনমেন্ট।।
Bangladesh Open University Assignment
এসাইনমেন্টের শিরোনাম: একজন সুনাগরকিরে গুণাবলি উল্লখে পূর্বক নাগরিকেরকর্তব্য ও কর্তব্যের শ্রেনী বিভাগ বর্ণনা করুন।
বিভিন রাষ্ট্র বিজ্ঞানীর বক্তব্যে নাগরিকের অনেকগুলো গুণ উল্লেখ রয়েছে, তবে লর্ড ব্রাইস প্রদত্ত উপাদানগুলোই এ পর্যন্ত সবেচেয়ে গ্রহণযোগ্য । তিনি মনে করেন কোন নাগরিক সুনাগরিক হিসেবে পরিগণিত হবে যখন এই তিনটি গুণ তার মধ্যে থাকবে যথা- বুদ্ধি, আত্মসংঘম, বিবেক থাকে ।
বুদ্ধি (Intelligence) :
বুদ্ধিমান নাগরিক রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য । আধুনিক রাষ্ট্র নাগরিকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে। একজন সচেতন ও বুদ্ধিমান নাগরিক এইসব সেবাগুলো কি, কোথা থেকে পাওয়া যায় ও কিভাবে পাওয়া যায় তা ভালোভাবে জানে । তাছাড়া রাষ্ট্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কেও অনেক জ্ঞান রাখে যা তাকে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালনের জন্যও একজন নাগরিককে প্রথমত বুদ্ধিমান হওয়া প্রয়োজন ।
আত্মসংযম (Self-Control):
আত্মসংঘম ত্যাগ করা ও অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা হলো আত্মসংযম | আত্মসংযম ছাড়া কেউ সুনাগরিক হতে পারে না। এটি নাগরিককে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িতৃশীল করে। অনেক ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে উৎসাহ যোগায়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আত্মসংযম অপরিহার্য । অন্যকে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল রাখতে হলে বিরোধী দল, সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিত সকল গোষ্ঠীর মতামত এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহমর্মি হতে হয়। তাই সুনাগরিক হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই আত্মসংযমী হতে হবে ।
বিবেক (Conscience):
বিবেক আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তাবে সকল মানুষের বিবেক এক রকমভাবে কাজ করে না। এটি স্বকীয় ও মৌলিক একটি সত্তা। এই বিবেকই মানুষকে ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে শেখায়। অর্থাৎ বিবেক সম্পন্ন মানুষ সাধারণত অন্যের ক্ষতি না করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনে কাজ করে। অন্যদিকে বিবেকহীন মানুষ অপরের ভালমন্দ চিন্তা না করিয়া নিজ স্বার্থে লিপ্ত থাকে| সুনাগরিক সবসময় নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে । বিবেক পথ প্রদর্শকের ন্যায় ব্যক্তির জীবনকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে ।
নাগরিকের কর্তব্য বলতে নাগরিকের দায়িতৃ বোঝায় । নাগরিকগণ যেমন রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করে, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যও রয়েছে। রাষ্ট্র যেমন নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার দান করে, তেমনি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য আইন মেনে চলা, কর প্রদান করা ইত্যাদি । যেমন-নাগরিকগণ যদি নিয়মতি কর পরিশোধ না করে তবে রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবে না, ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে । এমনি করে অন্যান্য কর্তব্যও যদি নাগরিকগণ পালন না করে তবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রই বিকল হয়ে যাবে ।
নাগরিক কর্তব্যের শ্রেনী বিভাগ : নাগরিক কর্তব্যকে বেশ কয়েকটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়।
সামাজিক কর্তব্য : সমাজ জীবনকে সুন্দর ও উন্নত করার জন্য সমাজের প্রতি মানুষের অফুরন্ত কর্তব্য বিদ্যমান । সামাজিক অনুষ্ঠান গঠন, পরিচালনা, সন্তানদের শিক্ষিত ও মানুষ করে তোলা, সমাজে প্রচলিত রীতি-নীতি মেনে চলা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সামাজিক কর্তব্য |
রাজনৈতিক কর্তব্য : সুষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নাগরিকের অনেক রাজনৈতিক কর্তব্য পালন করতে হয়। যেমন- রাষ্ট্র প্রণীত আইন মেনে চলা, সততার সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা, নিজ নিজ পেশার প্রতি দায়িত্ববান হওয়া ।
অর্থনৈতিক কর্তব্য : উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য। নিয়মিত খাজনা ও কর প্রদান করা, শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজে অংশগ্রহণ করা, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করা, প্রয়োজনে বিনা পারিশ্রমে রাষ্ট্রের সেবা করা অর্থনৈতিক কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত |
নৈতিক কর্তব্য- নাগরিক তার নীতিবোধে তাড়িত হয়ে যেসব কর্তব্য পালন করে তাকে নৈতিক কর্তব্য বলে। যেমন- দরিদ্রকে সাহায্য করা, অন্ধকে পথ দেখানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা, অন্যায় এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো ইত্যাদি।
আইনগত কর্তব্য- রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যগুলো হলো আইন মান্য করা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা, কর প্রদান, সন্তানদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রের সেবা করা ইত্যাদি।