প্রশিক্ষণ তথ্যশিক্ষক নিয়োগ তথ্যশিক্ষা খবরশিক্ষা নিউজ

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রায় চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রায় চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ বিস্তরণে অনলাইন শিক্ষক প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বক্কর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব কামাল হোসেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষকগণ এতোদিন যে আঙ্গিকে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে তাদের শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষায় এই যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এতে আমাদের শিক্ষকদের প্রস্তুত করার জন্য প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। এ জন্য আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রত্যেক শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষককে একই সময়ে একই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিক্ষকরা যাতে প্রশিক্ষণ হাতে-কলমে গ্রহণ করার আগে নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে পারে। প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষায় যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বিশদভাবে জানার ফলে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাক্রমে যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তাতে আমাদের প্রস্তুতিটাও ব্যাপক। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় যে বাধা আসবে, তা হলো— আমাদের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, অভ্যাস। শিক্ষার্থী কত নম্বর পেলো, বছর শেষে শ্রেণিতে কোনও জায়গায় শিক্ষার্থীর অবস্থান সেটা নিয়ে আমরা যে পরিমান উদ্বিগ্ন এবং তার উপর আমরা যত বেশি জোর দেই, তার থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থী কতটা শিখছে, কতটা ভালোমানুষ হচ্ছে, কতটা তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হচ্ছে, কতটা মানবিক মানুষ হচ্ছে, তার সৃজনশীলতা কতটুকু বিকাশ হচ্ছে সেটা দেখবার মতো দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে কিনা সেটা খুব জরুরি। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে যদি সেই জায়গাটিতে আমরা পরিবর্তন আনতে না পারি, তাহলে আমাদের আকাঙ্খা সফল হবে না। সে জন্য আমরা আসলে কী চাইবো সেই জায়গায়টিতে কাজ করবার প্রয়োজন রয়েছে। সে জন্য আমাদের প্রয়োজন মনোভাব পরিবর্তনের কাজটি জোর দিয়ে করা।
দীপু মনি বলেন, জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে ষষ্ট ও সপ্তম শ্রেণির যে বই হাতে পাবেন সেটিই একেবারে চূড়ান্তরূপ সেটি ভাববেন না। এটিই চূড়ান্ত রূপ নয়। এর উপর আরও কাজ করবার আছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণেও আরও পরিবর্তন নিয়ে আসবো। এটি অনেক বড় কাজ। শিক্ষায় আমরা পরিবর্তনের কথা বলছি না। আমরা সংস্কারের কথা বলছি না। আমরা শিক্ষায় রুপান্তরের কথা বলছি। আমরা দুই/তিন বছরের চেষ্টায় একেবারে নিখুত একটা পরিকল্পনা করে ফেলবো সেটা বলার দৃষ্টতা আমার নেই। তবে আমরা সবাই মিলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবো এটি আমার বিশ্বাস।

Read more-প্রাথমিকে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষ করার চিন্তাভাবনা আগামী জুলাই মাস থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়ে নতুন একটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এ কার্যক্রমের আওতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি করা হবে।

বাড়তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের বাংলা, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে অভিজ্ঞ করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও প্রাথমিক স্তরে একজন শিক্ষককে সব বিষয় পড়াতে হচ্ছে। এ কারণে বিষয় অনুযায়ী দক্ষ শিক্ষক গড়ে তোলা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো মতে চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

প্রাথমিকে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষ করার চিন্তাভাবনা

বিষয়টিকে আমলে নিয়ে বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি করা হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলা, ইংরেজি ও অংকের শিক্ষক তৈরি করা হবে। বর্তমানে যেসব শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, তাদের বাড়তি প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ একটি বিষয়ে পারদর্শী করা হবে। এরপর তারা সম্পূরক বিষয়ে ক্লাস নেবেন।

তবে বিজ্ঞানের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় আলাদাভাবে বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

সচিব বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে। একজন শিক্ষক সব বিষয়ের ক্লাস নেয়ায় শিক্ষার্থীরা কে, কোন বিষয়ে দুর্বল তা শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে। এর ফলে দুর্বল শিক্ষার্থীরা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তিন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলা, সমাজ ও ধর্ম বিষয়ে একজন, বিজ্ঞান বিষয়ে একজন ও ইংরেজি বিষয়ে একজন করে শিক্ষক তৈরি করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যাতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। আর এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে ৫৫টি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিজ্ঞ করে তোলা হয়ে থাকে।

কর্মকর্তারা জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে একটি, প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ২টি এবং ৩য় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট পাঁচটি বিষয় পড়ানো হয়। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের তিন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বাংলা শিক্ষক বাংলা, সমাজ ও ধর্ম, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বিজ্ঞান বিষয় পড়াবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরিতে ৫৫টি পিটিআইয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যিনি যে বিষয় পড়াতে আগ্রহী হবেন তাকে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরিতে শিক্ষকদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষক দেয়া হবে। যেসব জেলায় এখনও পিটিআই গড়ে তোলা হয়নি পার্শ্ববর্তী জেলায় (যেখানে পিটিআই রয়েছে) তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি অর্ধশত পিটিআই প্রশিক্ষককে (ইন্সট্রাকটর) ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইংরেজি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যারা ইংরেজি পড়াতে আগ্রহী তাদের বাড়তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে পড়ানোর ওপর অভিজ্ঞ করে তুলবেন। এভাবে তিন ক্যাটাগরিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক তৈরি করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি হলে বাংলা, ইংরেজি ও অংকে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা কমে যাবে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিক্ষক একই বিষয়ে পাঠদান করবেন। এর ফলে কোন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে দুর্বল- শিক্ষক তা সহজেই শনাক্ত করে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে তা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হবেন।

তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি)-৪ বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক কার্যক্রমও রয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে DailyResultBD.com ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group