বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম চলবে: ইউজিসি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম চলবে ইউজিসি। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষা নিতে পারবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্টি পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রমে শর্ত শিথিল করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে ক্লাস, সেমিস্টার ফাইনাল ও অন্যান্য পরীক্ষা এবং ভর্তি কার্যক্রম চালাতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের চাপ দিতে পারবে না। সেই সঙ্গে কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তার বেতন-ভাতা কিংবা চাকরি সংক্রান্ত সমস্যাও সৃষ্টি করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনলাইন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। সভাসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি তাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয় ঠিক করবে। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা কীভাবে নেবে, সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেবে কমিশন। পাশাপাশি আগামী সেমিস্টারের ভর্তি কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত চলবে; সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন দেবে।
বৈঠকে ছাত্র-ছাত্রীদের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষার বিষয়ে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য কয়েকটি অপশন দেবে ইউজিসি। এ ক্ষেত্রে আগামী সেমিস্টারের শুরুতে বর্তমান সেমিস্টারের পরীক্ষা নিতে পারে। এছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে যেসব পদ্ধতিতে অনলাইন পরীক্ষা, সেই প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা যাবে। তবে পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ের জন্য চাপ দেয়া যাবে না।
সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে চলতি সেমিস্টারে পাস করানোর প্রচেষ্টার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
গত ২৪ মার্চ ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে (ইউজিসি) অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করা হয়। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিসহ বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করে।
তবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সুবিধার আড়ালে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিতেও শুরু করেছে। আর এতেই আপত্তি জানিয়েছে ইউজিসি। তারা অনলাইনে পরীক্ষা ও ভর্তি নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুেলাকে নির্দেশ দিয়েছে।
ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে করোনা ভাইরাসকালীন সময়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্ৰহণ, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে ইউজিসি’র নির্দেশের কথা জানােনা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি’র পরামর্শ অমান্য করে অনলাইনে পরীক্ষা গ্ৰহণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমনকি দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সামার সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম কোনভাবেই গ্ৰহণযোগ্য নয়।
এতে আরও বলা হয়, সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়া গ্ৰেড প্রদান, মূল্যায়ন এবং কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যা বিধি সম্মত নয়। ইউজিসির সাম্প্রতিক অফিস আদেশে এ ধরনের কার্যকলাপের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় নি। গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়কে অনতিবিলম্বে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
করোনা ভাইরাসকালীন সময়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্ৰহণ, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।