পড়া দ্রুত মুখস্থ করা ও মনে রাখার উপায় গুলো দেখে নিন 2024
পড়া দ্রুত মুখস্থ করা ও মনে রাখার উপায় গুলো দেখে নিন বা পড়া দ্রুত মুখস্থ বা আয়ত্ত করার উপায় 2023-2024 নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে। নিম্নে পড়াশোনা দ্রুত মুখস্থ করা ও মনে রাখার উপায় গুলো দেয়া হল।
পড়াশোনা শুরুর আগেই আমাদের যেই একটা জিনিস নিয়ে খুব মাথা ঘামাতে দেখা যায় সেটা হলো এই সময় ব্যবস্থাপনার মারপ্যাঁচ। কোন সাবজেক্ট কতক্ষণ পড়বো, কোন চ্যাপ্টার প্রথমে পড়বো, কোনটা শেষে ধরবো- এগুলা চিন্তা করতে করতেই আমাদের অনেকটা মূল্যবান সময় চলে যায়। শেষে দেখা যায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একটা রিসার্চে পাওয়া গিয়েছে যে, যতক্ষণ আমাদের মস্তিষ্ক বিভিন্ন কাজের চিন্তা-ভাবনার সাথে সমঝোতা করতে পারে না, ততক্ষণ আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থির হতে পারে না।
তাই আমাদের উচিত সকালে ঘুম থেকে উঠামাত্র দিনের সব দরকারি কাজ একটি কাগজে বা ডায়েরীতে লিখে ফেলা। এক্ষেত্রে ফোনের রিমাইন্ডার/টু ডু লিস্ট অ্যাপ ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব টু ডু লিস্ট আমাদেরকে দিনের সব কাজের একটা নির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারবে এবং এর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক আরও বেশি কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। এর মাধ্যমে কাজের বিভিন্ন অগ্রাধিকারও নির্ধারণ করে ফেলা সম্ভব। তবে সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারটি হলো, পুরো কাজটি করতে ৫-১০ মিনিটের বেশি সময় নেয়া যাবে না। খুব দ্রুতই কাজের লিস্টটি বানিয়ে ফেললে আমরা দ্রুত পড়াশোনার কাজ শুরু করে দিতে পারবো।
বর্তমান বিশ্বে প্রোক্রাস্টিনেশন একটা কমন সমস্যা। ফেসবুকে মানুষের বায়ো ঘাটাঘাটি করলে যতটা প্রোক্রাস্টিনেটর পাওয়া যায়, বাস্তব জীবনে তার সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। আলসেমি বা শ্রমবিমুখ স্বভাবকে আধুনিক ইংরেজিতে বলা হয় প্রোক্রাস্টিনেশন। আলসেমিতে “কালকে থেকেই পড়তে বসবো” স্বভাব আমাদেরকে অনেকটাই পেছনে ফেলে দেয়। এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান হলো প্রোক্রাস্টিনেশনের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা। দেখা যায়, শুরুতে আমাদের অনেকেই অনেক পদক্ষেপ ঠিক করি আলসেমি ছেড়ে দেবার, কিন্তু বাস্তবে সে অনুযায়ী কাজ করা যে খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
পড়াশোনার অগ্রগতির হিসাব রাখতে হবে। কোন চ্যাপ্টার কতটুকু শেষ হয়েছে, সিলেবাসের কোন অংশে বেশি গুরুত্ব না দিলেই নয়- এইরকম বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো বিষয় পড়তে গেলে প্রয়োজনীয় অনেক উপকরণ, দরকারি সহায়তা পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় বেশি রাত হয়ে গিয়েছে কিংবা পড়তে ইচ্ছা করছে না- এইরকম নানা বাহানার ফাঁদেও আমরা পা দেই। ফলস্বরূপ, আমরা ঐ বিষয়টিকে পরবর্তীতে পড়ার জন্য রেখে দিই। এমনটা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজ চেষ্টায় যতটুকু সম্ভব, ততটুকু পড়ার চেষ্টা করাটাই শ্রেয়।
জোরে পড়ুনঃ-
জোরালো কণ্ঠে পড়ুন। জোরে পড়লে মাথায় তথ্য দ্রুত ঢুকে যায়। যেমন একটি গান যখন শোনেন, তখন তা দ্রুত মনে পড়ে। যা পড়ছেন তা কানে প্রবেশ করলে দ্রুত মুখস্থ হবে।
লক্ষ্য স্থির করুনঃ-
পড়তে বসলে নিজের লক্ষ্য স্থির করুন। বইয়ের কত পাতা পর্যন্ত কত সময়ের মধ্যে শেষ করবেন তা ঠিক করে নিন। নয়তো মনোযোগ হারাবেন এবং সময়ের অপচয় হবে।
নিজেই যখন শিক্ষকঃ-
নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠুন। কি পড়লেন, কি মুখস্থ করলেন ইত্যাদি বুঝতে নিজেই শিক্ষকতা পালন করুন। নিজেই পরীক্ষা দিন এবং তা যাচাই করুন।
নোট করুনঃ-
যাই শিখবেন তাই লিখে ফেলুন। এগুলো নোট করুন। লেখা হলে তা দ্রুত মাথায় ঢুকে যাবে এবং সহজে ভুলবেন না।
ইন্টারনেটের ব্যবহারঃ-
আধুনিক যুগে পড়াশোনার বড় সুবিধা দেয় ইন্টারনেট। বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে ধারণা নিন। যে বিষয়ে পড়ছেন তার সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই হয়তো বইয়ে নেই। এগুলো ইন্টারনেটে দেখে নিন। এতে ধারণা পরিষ্কার হবে।
বিরতি দিনঃ-
একটানা অনেকক্ষণ পড়লে অস্থিরতা চলে আসবে। এর জন্যে নিয়মিত অল্প সময়ের জন্যে বিরতি নিন।
চিউইং গামঃ-
এটি চিবোতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, চিউইং গাম চিবোতে চিবোতে পড়লে তা মাথায় দ্রুত প্রবেশ করে। এ সময় মস্তিষ্কের কার্যক্রম দ্রুত হয় এবং গামের ফ্লেভার বেশ উপকারী হয়ে ওঠে।
হাঁটুনঃ-
বেশ কিছুক্ষণ পড়ার পর ১৫-২০ মিনিট হেঁটে আসুন। এতে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে।
লেখাপড়ার জন্য কোন সময়টা বেছে নিতে হবে, তা একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ রাত জেগে পড়াশোনা করে, কেউ সকালটাকেই মুখ্য সময় হিসেবে বেছে নেয়। তবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ঘুমের পর ভোরবেলাই পড়াশোনার উপযুক্ত সময় হিসেবে মনে করা হয়।
কৌশল অবলম্বন: পড়া মনে রাখা একটি কৌশল। কোনো একটি পড়া পড়ে নেয়ার পর সাতটি ভাগে ভাগ করতে হয় এবং প্রতিটি ভাগের জন্য এক লাইন করে সারমর্ম লিখতে হয়। ফলে পড়ার বিষয়টি সাতটি লাইনে সীমাবদ্ধ থাকে। এর প্রতিটি লাইন একটি পাতায় লিখে অধ্যায় অনুযায়ী একটি গাছ তৈরি করে গাছের নিচ থেকে ধারাবাহিকভাবে পাতার মতো করে সাজাতে হবে, যাতে এক দৃষ্টিতেই পড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মনে পড়ে যায়। এ পাতাগুলোয় চোখ বোলালে লেখা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলা, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ কৌশল অধিক কার্যকর।
পড়তে হবে শব্দ করে: পড়া মনে রাখার এটি একটি কার্যকর পন্থা। উচ্চঃস্বরে পড়লে শব্দগুলো কানে প্রতিফলন হয়ে তা মস্তিষ্কে সহজেই ধারণ করে। শব্দহীনভাবে পড়া হলে মনের মধ্যে অন্য চিন্তা ঢুকে পড়ে, পড়ার আগ্রহটা কমে যায়। ফলে পড়া মুখস্ত হয় না।
মনে রাখা: সাধারণত মেধাবী ছাত্রদের দেখা যায়, কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে তারা বিভিন্ন বই থেকে উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতো করে একটা নোট তৈরি করে। এটা খুবই ভালো পন্থা। এতে ওই বিষয় সম্পর্কে বারবার পড়ার কারণে তাদের নোট তৈরির সময়েই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকটা ধারণা অর্জন করা সম্ভব হয়। পরে সেই বিষয়টি মনে রাখতে কোনো কষ্টই হয় না।
ইংরেজির অর্থ জেনে পড়া: ইংরেজি পড়া মুখস্ত করার আগে শব্দের অর্থটা জেনে নিতে হবে। অর্থ না জানলে পুরো পড়াটাই বিফলে যাবে। আর সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্থ জানা থাকলে অবশ্যই উত্তর দেয়া যায়।