তাহারেই পড়ে মনে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি রচনা করেছেন সুফিয়া কামাল। তাহারেই মনে পড়ে কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
প্রকৃতিতে শীতের পর বসন্ত আসে এক নতুন রূপে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মনে আছে শীতের রিক্ত ও বিষন্ন ছবি। সুফিয়া কামালের মন ভারাক্রান্ত। তার কন্ঠ নিরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত সুফিয়া কামালের মনে সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে। কারণ সুফিয়া কামালের প্রথম স্বামী তার কাব্যসাধনার প্রেরণা। তার মৃত্যুতে গভীর ভাবে অন্তরে যে বিষন্নতা জাগে সে বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে।
তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি মূলত আপনজনকে হারানোর বেদনা নিয়ে লেখা। আপনজনকে হারানোর বেদনার কারণে কোনকিছুই কবির ভালো লাগছেনা। এ নিয়েই কবি এবং তার ভক্তের মাঝে আলোচনা হয় কবিতাটিতে।
প্রশ্ন- হে কবি নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়— কবি কেন নিরব?
উত্তর: শীতের রিক্ততা ভুলতে পারছে না বলে
প্রশ্ন- তাহারেই পরে মনে কবিতায় কে, কাকে প্রশ্ন করেছে?
উত্তর: কবি ভক্ত কবি কে
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর: মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার টির প্রধান গুণ কি?
উত্তর: নাটকীয়তা ও সংলাপ রীতি
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি কোন বিষয়ে তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: প্রকৃতি ও মানব মনের সম্পর্ক
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কোন অর্থে সার্থক?
উত্তর: প্রকৃতি ও মানব মনের সম্পর্ক নিরূপণ
প্রশ্ন- সুফিয়া কামালের জীবনী শূন্যতা নেমে আসে কেন?
উত্তর: স্বামীর মৃত্যুতে
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতা টির গঠনরীতি কোন বৈশিষ্ট্যের?
উত্তর: নাটকীয় গঠনরীতি
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি তে শীতকালকে মাঘের সন্ন্যাসী বলার কারণ কি?
উত্তর: শীতকাল খালি হাতে বিদায় নেয়
প্রশ্ন- তাহারেই পরে মনে কবিতায় পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে চলে গেছে কি?
উত্তর: মাঘের সন্ন্যাসী
প্রশ্ন- নিচের কোনটিতে সুফিয়া কামালের অভিমান প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: কহিল সে পরম হেলায়
প্রশ্ন- তাহারেই পরে মনে কবিতায় কোভিদ মন কিসে আসন্ন হয়ে আছে?
উত্তর: রিক্ততার হাহাকারে
প্রশ্ন- বসন্ত বন্দনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বসন্তের স্বস্তি করা
প্রশ্ন- তাহারেই পরে মনে কবিতায় কার প্রতি কবির তীব্র বিমুখতা?
উত্তর: বসন্তের পুতি
প্রশ্ন- তাহারেই পড়ে মনে কবিতা একে অর্ঘ্য বিরচন করে?
উত্তর: বসন্ত
প্রশ্ন- ফুল কি ফোটেনি সাখে? কবিকে নিয়ে প্রশ্ন করেছেন?
উত্তর: অভিমান ও বিদ্রুপ করে
প্রশ্ন- উপেক্ষায় ঋতুরাজে কবিতায় বলে ভক্ত উল্লেখ করেছে?
উত্তর: ব্যথা
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন : পৃথিবীতে জন্ম নেবার পর থেকেই মানুষের মধ্যে তৈরি হয় একটি মধুর সম্পর্ক, তার নাম ভালোবাসা। কিন্তু এই ভালোবাসার মাঝে আরও একটি বাস্তবতা হলো বিরহ-বিচ্ছেদ, আমরা কমবেশি সবাই জানি। আর এই বিরহ-বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে ঘটনার অন্তরালে থাকে অনেক অজানা কাহিনি, যা বাস্তব জীবনের অগ্রগতিতে বাধ ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং জীবনের পথচলার গতি থামিয়ে দেয়।
ক. কীসের প্রতি কবির তীব্র বিমুখতা?
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনকে কীভাবে সম্পর্কিত করা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য কোন দিক বিবেচনায় ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার অনুগামী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাবসত্যকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরতে পেরেছে কি? মতামত দাও।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক বসন্তের প্রতি কবির তীব্র বিমুখতা।
খ আলোচ্য কবিতায় শীতকালীন প্রকৃতির রিক্ত রূপের সঙ্গে ব্যক্তিহৃদয়ের শোকানুভূতির তুলনার মধ্য দিয়ে প্রকৃতি ও মানবমনকে সম্পর্কিত করা হয়েছে।
কবির প্রিয়তম স্বামীর মৃত্যু হয় শীতকালে। প্রিয়জনের এভাবে অকালে চলে যাওয়ার বিষয়টিকে শোকে মুহ্যমান কবি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। আর তাই সময় পরিক্রমায় প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে থাকে বিদায়ী শীতের রিক্ততার ছবি। আলোচ্য কবিতাটিতে শীতের এই রিক্ততার সাথেই বিরহকাতর কবিমন যেন একাত্ম হয়ে উঠেছে। এভাবেই প্রকৃতির নিঃস্ব ও রিক্ত রূপের সঙ্গে শোকার্ত কবিমন সম্পর্কিত হয়ে উঠেছে।
গ. উদ্দীপকটি বিচ্ছেদবেদনার প্রসঙ্গ তুলে ধরার সূত্রে ‘ কবিতার অনুগামী।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের বেদনাঘন অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে। কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের অকাল প্রয়াণে ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর সেই বেদনাদগ্ধ ও রিক্ত অভিব্যক্তিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য কবিতাটি তে।
উদ্দীপকের বক্তব্যে পারস্পরিক ভালোবাসাকে মধুর বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে এই মধুর সম্পর্কের মাঝে বিচ্ছেদবেদনার একটি বিষয় থাকে বলে সেখানে মত প্রকাশ করা হয়েছে। এ কারণে অনেক সময় স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অগ্রগতিও স্তিমিত হয়ে পড়ে। একইভাবে, ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাতেও কবি তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনের রিক্ততার অনুভূতিকে রূপায়িত করেছেন। প্রিয়তম স্বামীর বিরহ-বেদনায় কবির জীবনে ছন্দপতন ঘটে। তিনি । ডুবে যান সীমাহীন বিষণ্নতায়। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতা এবং উদ্দীপক উভয় ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদবেদনার প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। এদিক থেকে উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার অনুগামী।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাবসত্যকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরতে পারেনি বলেই আমি মনে করি।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবিমন প্রিয়তম স্বামীর অকাল প্রয়াণের বেদনায় ভারাক্রান্ত। স্বামীর এই আকস্মিক মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। এ কবিতায় শোকাচ্ছন্ন কবির এই হৃদয়যাতনার কথকতা বাণীরূপ পেয়েছে। এছাড়া প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের নিবিড় সম্পর্কের দিকটিও তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে কবিতাটিতে।
উদ্দীপকে বিচ্ছেদবেদনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়েছে বিচ্ছেদকে। উদ্দীপকের বক্তা মনে করেন, ভালোবাসার সম্পর্কের মাঝে একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো বিচ্ছেদবেদনা। অজানা নানা অনভিপ্রেত কাহিনি ও ঘটনাই এর মূল কারণ। পাশাপাশি এর দ্বারা স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। আলোচ্য কবিতাটিতেও এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক এবং প্রিয়তম স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে নেমে আসে দুঃসহ বিষণ্নতা। সে বিষণ্নতাকে কবি যেন কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। শোকাতুর কবিমনে তাই ঋতুরাজ বসন্তের মোহনীয় রূপ রেখাপাত করতে পারেনি। এছাড়া কবিতাটিতে বসন্ত-প্রকৃতির বর্ণনার মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের সম্পর্কও উন্মোচিত হয়েছে। উদ্দীপকের বক্তব্যে আলোচ্য কবিতার বিচ্ছেদবেদনার দিকটি উঠে এলেও মানবমনের ওপর প্রকৃতির প্রভাবের দিকটি উপেক্ষিতই থেকে গেছে। সেদিক বিবেচনায় উদ্দীপকটি এ কবিতার ভাবসত্যকে সম্পূর্ণ তুলে ধরতে পারেনি।