রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রেইনকোট গল্পটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গল্প। রেইনকোট গল্পের মূল পটভূমি হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার অবস্থা নিয়ে।
রাজাকার অলির ছেলে বাসার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে খুব সামান্যই জানে। তার ধারণা, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা ঠিক কাজ করেছিল। একদিন সে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি দেখে। চলচ্চিত্রটিতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা দেখে সে বিস্মিত হয়ে যায়। ফলে তার চেতনায় আসে পরিবর্তন। এখন সে রাজাকারদের ঘৃণা করে।
ক. ‘রেইনকোট’ গল্পটির রচয়িতা কে? ১
খ. “ক্যাপটেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল”— কথাটি কেন বলা হয়েছে?
গ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবের সঙ্গে উদ্দীপকের মূলভাবের তুলনা করো।
ঘ. “বাসারের কাছে ‘গেরিলা’ যেমন, নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনেকোট তেমন” – উক্তিটির যথার্থতা যাচাই করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক ‘রেইনকোট’ গল্পটির রচয়িতা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
খ. ইসহাক মিয়ার ক্ষমতার দাপট বোঝাতে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে। ইসহাক মিয়া কলেজের প্রিনসিপালের পিওন। অথচ কলেজে পাকিস্তানি মিলিটারির ক্যাম্প করার পর থেকে এই পিওনের ভয়েই সবাই অস্থির। কেননা সে মিলিটারিদের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কথায় কথায় উর্দু বলে। মিলিটারি কর্নেল কলেজে আসার পর থেকে ইসহাক মিয়ার ক্ষমতাও যেন কর্নেলের সমান হয়ে যায়। অতটুকু না হলেও ক্যাপ্টেন পদের নিচে তাকে কোনোভাবেই ভাবা যায় না। এতটাই তার প্রভাব।
গ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাব— একজন ভীরু ও দুর্বলচিত্ত মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবন।
‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা ছিলেন ঢাকা কলেজে রসায়নের শিক্ষক। তিনি ভীরু, দুর্বলচিত্ত ও পলায়নপর মানুষ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন। এক বাদলা দিনের সকালে কলেজের মিলিটারি ক্যাম্পে যাওয়ার সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরেন। এই রেইনকোটের স্পর্শ তাঁকে সাহসী করে তোলে। তিনি দৃঢ়চিত্ত হয়ে ওঠেন এবং মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হন। ফলে মিলিটারির অত্যাচার তাঁর কাছে নিছক উৎপাত বলে মনে হয়।
উদ্দীপকের বাসার রাজাকার অলির বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বাসারের চেতনায় একসময় পিতার ধ্যান-ধারণা বর্তমান ছিল। সে মনে করত, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীরা ঠিক কাজ করেছে। কিন্তু একদিন সে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি দেখে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরতায় বিস্মিত হয়। চলচ্চিত্রটি তার চেতনায় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে সে নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং রাজাকারদের ঘৃণা করতে শুরু করে। অর্থাৎ, ‘রেইনকোট’ গল্প ও উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই অনুঘটকের প্রভাবে চেতনার ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়।
ঘ. ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রতকরণে মিন্টুর রেইনকোটটি অনুঘটকের কাজ করে।
আলোচ্য গল্পের নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরার পর ক্রমশ দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী হয়ে ওঠেন। তিনি মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হন। একজন মুক্তিযোদ্ধার পোশাকের স্পর্শ ভীরু ও পলায়নপর নুরুল হুদাকে সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে। ফলে মিলিটারির অত্যাচার তাঁর কাছে রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ার মতো অগ্রাহ্য বিষয়ব লে মনে হয়।
উদ্দীপকের রাজাকারপুত্র বাসার একসময় পিতার ধ্যান-ধারণা দ্বারা চালিত হতো। সে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করত। কিন্তু ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি দেখার পর তার চেতনায় পরিবর্তন আসে। চলচ্চিত্রটি তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রতকরণে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। সে রাজাকারদের ঘৃণাক করতে শুরু করে।
উদ্দীপকের বাসার ও ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা উভয়ের নিকট যথাক্রমে ‘গেরিলা’ ও রেইনকোট চেতনা পরিবর্তনের প্রেরণারূপে দেখা দিয়েছে। মিন্টুর রেইনকোট পরে যেমন নুরুল হুদার মানসিকতার পরিবর্তন হয়, তেমনি চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ দেখার পর বাসারের মানসিকতায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই বলা যায়, “বাসারের কাছে ‘গেরিলা’ যেমন, নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনেকোট তেমন” উক্তিটি যথার্থ ।