অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একমত
পরিস্থিতি সাপেক্ষে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকরা একমত হয়েছেন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য একাডেমিক কাউন্সিলে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এদিকে সম্প্রতি চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া করোনার কারণে আটকে থাকা ভাইভা পরীক্ষা অনলাইনে নিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এমফিল ও পিইচডির শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বিশেষ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরাও এই সুযোগ পাচ্ছে।
বেশীর ভাগ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া পরবর্র্তী বছরের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার চাপবোধ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায় গত মাসে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে কীভাবে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া যায় তার প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে বিভাগের কাছে। বিভাগ থেকে ডিন অফিস হয়ে এসব পরামর্শ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের টেবিলে। কলা ও মানবিকী অনুষদের পক্ষ থেকে দেওয়া সুপারিশে বলা হয় অনুষদের সকল শিক্ষক অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। অনুষদের পক্ষ থেকে ৫০%/৬০% কোর্স শিক্ষকের মূল্যায়নে জন্য ও ৫০%/৪০% চূড়ান্ত পরীক্ষায় অনলাইনে মূল্যায়নের জন্য রাখার প্রস্তাব রাখা হয়। এছাড়া চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য অনলাইনে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে ৮/১২/২৪/৪৮/৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর পাঠানো সুপারিশ রাখা হয়। প্লাগারিজম এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থার সুপারিশও করা হয়। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে পাঠানো সুপারিশে অনুষদের শিক্ষকরা সরাসরি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পরিস্থিতি হয়নি বলে মত দেন। তবে কিছু কিছু বিভাগ থেকে টার্ম পেপার জমা দেওয়ার প্রস্তাবনা রাখা হয়।
যোগাযোগ করা হলে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ আমরা আসলে ভাবছি শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তম কী হতে পারে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত, তবে আলোচনা এখনো চলমান। চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ৫০%/৬০% বরাদ্দ না রেখে ৭০% রাখা হতে পারে। উপস্থিতি নাম্বার তুলে দিয়ে তার বদলে আরেকটি ১০ নাম্বারের পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। শিক্ষকরা এভাবে পরীক্ষা নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন। তবে আমি মন থেকে এটাকে একেবারে সঠিক পদ্ধতি মনে করছি না। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ায় এগিয়েছে। এখন আমরা বসে থাকলে আমাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা, ডিগ্রী ও জব মার্কেটে পিছিয়ে পড়বে। তবে এখন যেমন পরীক্ষা নেওয়ার একটা দাবি উঠছে তখন অনলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আসলেও একটা প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউট পরিচালকদের প্রধানদের নিয়ে গঠিত অনলাইন পরীক্ষার সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির প্রধান অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, যারা মাস্টার্সে ও চতুর্থ বর্ষে তাদের কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় তা নিয়ে আমরা ভাবছি। কারণ বসে থাকলে তারা গ্লোবালি পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে যাদের কয়েকটা কোর্সের পরীক্ষা বাকি তাদের আমরা কোনরকম সরাসরি এনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছি। কারণ অনলাইনে পরীক্ষার নাম্বার বণ্টন ভিন্ন হবে। একই পরীক্ষা এক এক কোর্সে এক এক ধরনের নাম্বার বণ্টন রাখা যাবে না। তবে মাস্টার্স ও চতুর্থ বর্ষ যাদের কোন পরীক্ষা হয়নি তাদের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেখানে আবার প্রাক্টিক্যাল কীভাবে নেওয়া হবে তাও প্রশ্ন। আর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মক টেস্টের আয়োজন করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীদের ডিভাইস নেই তাদের ডিভাইস নিতে লোন দেওয়ার কথাও ভাবতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, চূড়ান্ত পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায় ডিনরা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন। আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত হবে সামনের একাডেমিক কাউন্সিলে।